আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে ৬৫টি রাজনৈতিক দল। তবে এসব দলের বেশিরভাগই কাগজে-কলমে সক্রিয়, বাস্তবে নেই কোনো কার্যকর কমিটি বা কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এমনকি কিছু দলের ক্ষেত্রে সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করলেও, পরবর্তীতে সময় বাড়িয়ে জুন মাস পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দলগুলোর হালচাল
বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি দলের অদ্ভুত অবস্থা:
বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল: দলটির সভাপতি মো. নুর ইসলাম শিকদার জানান, তাদের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝড়ে উড়ে গেছে। নতুন সাইনবোর্ড তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ: দলটির সভাপতি আতিকুর রহমান রাজা দাবি করেন, তাদের ৮ জেলা ও ৭২ উপজেলায় কমিটি আছে। কিন্তু নিবন্ধনের শর্ত পূরণের কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।
বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা): দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ জাভেদ মো. সালেহউদ্দিন বলেন, ১০টি উপজেলায় তাদের কমিটি আছে। তবে কোন জেলায় অফিস আছে, তা তিনি জানেন না।
নিবন্ধনের শর্ত পূরণ হয়নি
নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে হলে দলগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক: ১. একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও কমিটি থাকতে হবে। ২. দেশের অন্তত ১০০টি উপজেলা বা থানায় দলের শাখা থাকতে হবে। ৩. অতীত নির্বাচনে কমপক্ষে একটি আসনে জয় বা ৫% ভোট পেতে হবে।
তবে আবেদনকারী ৬৫টি দলের মধ্যে ৮০ শতাংশই এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। অনেক দল ভুয়া ঠিকানা ও কমিটি তালিকা জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইসির চ্যালেঞ্জ
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “যাচাই-বাছাই শেষে শর্তপূরণকারী দলই কেবল নিবন্ধন পাবে।” তবে ৬৫টি দলের মাঠপর্যায়ের যাচাই করতে কমপক্ষে ৬ মাস সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন বিশ্লেষক ড. আব্দুল আলীম বলেন, “এবার ইসির জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করার জন্য নির্দিষ্ট একটা রোডম্যাপ করতে হবে।”
নিষ্ক্রিয় দলগুলোর ভাগ্য
বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত ৫০টি দলের মধ্যে ৩০টির বেশি সক্রিয় নয়। আইন অনুযায়ী, পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিলের বিধান থাকলেও, এখন পর্যন্ত তা প্রয়োগ হয়নি।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, নিবন্ধন পরবর্তী মনিটরিং ব্যবস্থা জরুরি। প্রতি ৫ বছরে রিভিউ করা হলে ভুয়া দলের দৌরাত্ম্য কমবে।
নির্বাচন কমিশনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—শর্তপূরণকারী দলকেই নিবন্ধন দিয়ে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা। নইলে, নামসর্বস্ব দল বাড়লে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মন্তব্য করুন