ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভূতের আক্রমণ

সুলাইমান রুবেল
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:২০ পিএম
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভূতের আক্রমণ

লোকসমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, ভূতের পা নাকি সবসময় পেছনে যায়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেরও ঠিক একই অবস্থা। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পুঁজিবাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী না থাকাবস্থায় বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও আস্থার ফলে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পায়। পরে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর পুঁজিবাজারের অগ্রগতি ভূতের মতো পেছনের দিকে পরিচালিত হচ্ছে।

একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ বা চালিকাশক্তি হলো পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার। হাসিনা সরকারের দুঃশাসন আমাদের পুঁজিবাজার ও মুদ্রাবাজার তছনছ করে দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপের ফলে মুদ্রাবাজার তথা ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মুদ্রাবাজারকে গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন অর্থ ছাপিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করেন। বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের মাধ্যমেও আমাদের মুদ্রাবাজার শক্তিশালী হতে থাকে, তথাপি বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী থেকে প্রাপ্ত ঋণ আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা আরও সংহত করে। এ কৃতিত্বের একমাত্র দাবিদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। অথচ তার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ। এই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আইসিবিকে ৪ শতাংশ সুদে প্রদত্ত ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ হতে আহসান এইচ মনসুর পুনরায় আইসিবিকে ঋণ পরিশোধের নামে মুদ্রা বাজারে ২ হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়, উপরন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক তাদের অংশের একটা শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যা পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটের সৃষ্টি করে। প্রকারান্তরে মুদ্রাবাজার তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে প্রয়োজন তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করা। অথচ বর্তমান কমিশন তা না করে ভূত যেরকম পেছনে হাঁটে, সেরকম হাঁটছে।

বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি না করে তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির একমাত্র উপায় হলো মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টরের উন্নয়ন ও উন্নতি। পুঁজিবাজার সংস্কারবিষয়ক সংস্কার কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সংস্কার বাস্তবায়ন না করে বর্তমান কমিশন তারল্য প্রবাহ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করছে। অথচ বর্তমান কমিশন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইট শেয়ার অনুমোদনের মাধ্যমে বাজারে তারল্য সংকট সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান করছে।

এখানে উল্লেখ্য, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইট শেয়ারের প্রদত্ত টাকা নিশ্চয়ই বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার হতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং এই টাকা পুঁজিবাজার হতে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে আবার মুদ্রাবাজারে চলে যাবে। কিন্তু বর্তমান কমিশন রেনেটা লিমিটেডকে কনভার্টবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন প্রদানের মাধ্যমে তারল্য সংকট আরও গভীর করার কাজে লিপ্ত আছে। এই মুহূর্তে যদি দ্রুততার সঙ্গে পুঁজিবাজার সংস্কারবিষয়ক কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে পুঁজিবাজার আরও গভীর সংকটে পতিত হবে। কিন্তু এ সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে বিএসইসির কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই গত সপ্তাহে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সূচকের যতই বৃদ্ধি হোক না কেন, সামনের দিনগুলোতে তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। কারণ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ন্যূনতম ছয় থেকে আট মাস সময়ের প্রয়োজন।

সম্ভাব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি ঈদের আগে হয়, তাহলে বর্তমান কমিশন এই সংস্কার আর বাস্তবায়ন করতে পারবে না, তাই বিএসইসিকে অনুরোধ করব যে আপনারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ন্যায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের পুঁজিবাজারকে ভূতের হাত থেকে রক্ষা করুন।

লেখক: সুলাইমান রুবেল, বিনিয়োগকারী, ঢাকা

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০