১৯৭১ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া গ্রামে সংঘটিত হয় একের পর এক নির্মম গণহত্যা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকার বাহিনীর হাতে দুই দফায় এই গ্রামের ৭৯ জন নিরীহ বাঙালি নিহত হন।
বান্দাইখাড়া গ্রামটি আত্রাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে আত্রাই নদীর তীরে অবস্থিত। এই হিন্দুপ্রধান গ্রামটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্থানীয় রাজাকার সর্দার জান বক্স শেখ (ওরফে জানা) এর সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী এখানে তাদের নৃশংসতা চালায়।
পাকিস্তানি সেনারা নৌকাযোগে গ্রামে প্রবেশ করে
হিন্দুপাড়া ঘেরাও করে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ
৮ জন হিন্দু যুবককে গুলি করে হত্যা
গীতা নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে তার ভাই রাধা গোবিন্দ বাধা দেন, তাকে হত্যা করা হয়
ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে একাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হন
ব্যাপক লুটপাট ও সম্পদ ধ্বংস
মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর ব্যবহার রোধে বাজারের বড় নৌকাগুলো ভেঙে দেন
রাজাকার কমান্ডার জান বক্স শেখ পাকবাহিনীকে নিয়ে পুনরায় আক্রমণ চালায়
প্রথমে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি
সমগ্র গ্রামে ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণ
৭০ জন যুবককে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা
লাশগুলো আত্রাই নদীতে ফেলে দেওয়া হয়
মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যকারী এছাহাক আলী সরদারকে হত্যা
এই গণহত্যার স্মরণে ঘটনাস্থলে একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে শহীদ ও আহতদের নাম উল্লেখ রয়েছে।
বান্দাইখাড়া গণহত্যা মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ: ১. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা ২. দুই দফায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ৩. নারী নির্যাতনের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (৬ষ্ঠ খণ্ড) লেখক: ফরিদুল আলম পিন্টু
মন্তব্য করুন