শ্রীরামলাল ও তার পরিবারকে পাকিস্তানি সেনারা দুই মাস ধরে আটক রেখে ক্রীতদাসের মতো কাজ করতে বাধ্য করে। তাদের সৈয়দপুরের রাস্তা ও সেতু মেরামতের কাজে লাগানো হয়।
১৩ জুন, পাকিস্তানি সেনারা প্রায় ৩০০ বাঙালি ও মাড়োয়ারী পুরুষ-মহিলাকে একটি ট্রেনে তোলে। নারীদের আলাদা কামরায় রাখা হয়।
ট্রেনটি কিছু দূর যাওয়ার পর থামানো হয়। পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় স্থানীয় গুন্ডারা ট্রেনে হামলা চালায় এবং পুরুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে রেললাইনের পাশে খনন করা ট্রেঞ্চে ফেলে দেয়।
এরপর তারা নারীদের কামরার দিকে এগিয়ে যায়। নারীরা বুঝতে পারেন যে তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হবে। সতীত্ব রক্ষার জন্য শ্রীরামলালের মা, দুই বোন, বৌদি ও ভাইঝি শাড়িতে আগুন লাগিয়ে জহরব্রত (আত্মদাহ) করেন। তাদের আর্তনাদে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
শ্রীরামলাল আগরওয়ালা কোনভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি ভারতে পৌঁছে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা জানান। তার ভাষ্যে, "আমার পরিবারের পাঁচ নারী শাড়িতে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিলেন, যাতে পাকিস্তানি পশুদের হাতে ধর্ষণ বা অপমানের শিকার না হতে হয়।"
এটি ছিল নারীদের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর যৌন সহিংসতা ও গণহত্যার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।
জহরব্রতের মতো চরম আত্মবলিদান দেখায় যে, অনেক নারীই ধর্ষণ ও অপমানের চেয়ে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন।
এই ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (মাড়োয়ারী হিন্দু) এর উপর নির্যাতনেরও প্রমাণ।
এই ঘটনাটি ১৯৭১-এর গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের একটি করুন অধ্যায়। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই খবরটি সেই সময় আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলেছিল।
সূত্র
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ জুন ১৯৭১
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারী নির্যাতনের দলিল
শ্রীরামলাল আগরওয়ালার সাক্ষাৎকার (প্রকাশিত রিপোর্ট)
মন্তব্য করুন