স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এদিন বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ এখন মাঝপথে রয়েছে। মুক্তিফৌজের বীর যোদ্ধারা রণাঙ্গনেই ইয়াহিয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাব দেবে।” তিনি ইয়াহিয়া খানের শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাবকে “সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রতি নিষ্ঠুর রসিকতা” আখ্যায়িত করে বলেন, “শেষ পাকিস্তানি সৈন্যকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।”
ময়মনসিংহে এক জনসভায় পাকিস্তানের সাবেক প্রাদেশিক মন্ত্রী হাশিমউদ্দিন আহমদ ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কার্যক্রমকে “পাকিস্তানের জন্য হুমকি” বলে উল্লেখ করেন। তিনি স্থানীয়দের “সতর্ক থাকার” আহ্বান জানান, যা পাকিস্তানি প্রপাগান্ডার অংশ হিসেবে দেখা হয়।
দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেস সেবাদল ক্যাম্পে ভাষণে শরণার্থী সংকটের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “ভারত দরিদ্র দেশ, কিন্তু আমরা মানবিক কারণে বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি। পরিস্থিতি শান্ত হলেই তারা ফিরে যাবেন।” তিনি বিশ্বসম্প্রদায়কে পাকিস্তানের ওপর চাপ বাড়ানোরও আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র: ওয়াশিংটন নিশ্চিত করে যে, ২৫ মার্চের পর পাকিস্তানকে নতুন কোনো অস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া হয়নি, তবে পূর্বে অনুমোদিত অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
কানাডা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিচেল শার্প ঘোষণা দেন, “পাকিস্তানে সামরিক রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে।” মন্ট্রিল বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজ ‘পদ্মা’-তে এফ-৮৬ স্যাবর জেটের যন্ত্রাংশ তোলা বাতিল করা হয়।
জাতিসংঘ: শরণার্থী হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান লন্ডনে সাংবাদিকদের বলেন, “৬০ লাখ শরণার্থীর সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি।”
যুগোস্লাভিয়া: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং প্রেসিডেন্ট টিটোর সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধ করেন। টিটো সমবেদনা ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন: মুক্তিবাহিনী নীলমনিগঞ্জ, হালসা ও আলমডাঙ্গায় রেললাইন উড়িয়ে দেয়।
হানাদারদের বিরুদ্ধে আক্রমণ: লক্ষ্মীপুরে হাবিলদার মতিনের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে কয়েকজন আহত হয়। ফেনীর বন্দুয়ায় ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর সাংবাদিক সিডনি শ্যানবার্গকে ঢাকায় প্রবেশের পর “পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার” অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। সামরিক সরকারের দাবি, তিনি “মিথ্যা সংবাদ” প্রচার করছিলেন।
সূত্র:
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (৫ম, ৮ম, ১০ম, ১২শ খণ্ড)
দৈনিক পাকিস্তান, ১ জুলাই ১৯৭১
দৈনিক ইত্তেফাক ও আজাদ, ১-২ জুলাই ১৯৭১
নিউইয়র্ক টাইমস, ১ জুলাই ১৯৭১
আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর (ভারত), ১-২ জুলাই ১৯৭১
মন্তব্য করুন