বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এদিন মুজিবনগর থেকে একটি ঐতিহাসিক বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে তারা জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানায় এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের উপর জোর দেয়। সিপিবি ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যা শুধু বাংলাদেশের জনগণকেই নয়, বিশ্বজনমতকেও সংগঠিত করবে।
বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সমালোচনা করে বলা হয়, তারা পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে অস্ত্র ও কূটনৈতিক সমর্থন দিয়ে গণহত্যায় সহায়তা করছে। এছাড়া, জাতিসংঘের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
একই দিনে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং লোকসভায় বলেন, শরণার্থী সমস্যা সমাধানে পাকিস্তানের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োজন। তিনি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর কথা উল্লেখ করেন।
দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান কে. এম. শেহাবউদ্দিন মুসলিম দেশগুলোর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানান।
নেদারল্যান্ডসের উন্নয়নমন্ত্রী বি. জে. উডনিক পাকিস্তানকে সাহায্য স্থগিতের ঘোষণা দেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, বিশ্বব্যাংকের ১১টি দাতাদেশ পাকিস্তানকে নতুন ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে।
চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আয়েন্দে জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্টের কাছে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।
আফ্রো-এশিয়া সংহতি সংস্থায় ভারতের প্রতিবাদ: অরুণা আসফ আলী সংস্থার পাকিস্তান-পক্ষভুক্তির তীব্র সমালোচনা করে ভারতের সদস্যপদ পুনর্বিবেচনার কথা বলেন।
২৬ জুন মুক্তিবাহিনী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফল অভিযান চালায়:
ময়মনসিংহ: হাবিলদার রেফাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তাগাছা থানা আক্রমণ করে ৪ পুলিশ নিহত ও অস্ত্র লুট করা হয়।
কুমিল্লা: সুবেদার ওয়ালীউল্লাহর দল কাফলাতলী রাজাকার ক্যাম্প দখল করে।
সিলেট: শ্রীপুরে পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটানো হয়।
ভারতের ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৮।
ব্রিটিশ শিশু ত্রাণ তহবিলের লেডি আলেকজান্দ্রা মেটকাফ কলকাতায় শরণার্থী শিশুদের সহায়তার ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ববিরোধিতা: পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চার্লস ব্রে পদ্মা জাহাজে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করলেও তা "সীমিত" বলে দাবি করেন। তবে, দুটি লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গ শান্তি সংসদ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র পাঠানোর তীব্র নিন্দা করে।
ঢাকায় জামায়াতে ইসলামীর গোলাম আযম বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তকে "ভারতের ষড়যন্ত্র" বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে, জেনারেল হামিদ নাটোরে শান্তি কমিটির সঙ্গে বৈঠকে "দুষ্কৃতিকারী দমনের" অঙ্গীকার করেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (সপ্তম, দশম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড)
দৈনিক ইত্তেফাক, আজাদ (২৭-২৮ জুন ১৯৭১)
আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর (ভারত, ২৭-২৮ জুন ১৯৭১)
দৈনিক পাকিস্তান, ২৭ জুন ১৯৭১
ওয়াশিংটন পোস্ট, জুন ১৯৭১
মন্তব্য করুন