২২ জুন নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। এ খবর প্রকাশের পর ভারত ও মুজিবনগর সরকার তীব্র নিন্দা জানায়।
মুজিবনগর সরকারের প্রতিবাদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পাঠানো এক তারবার্তায় বলেন, "পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানোর সংবাদে আমরা মর্মাহত। বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে, বাড়িঘর পোড়ানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ বাঙালিদের ওপর আরও নির্যাতনের সুযোগ করে দেবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র জেরি ফ্রিড হাইস স্বীকার করেন, একটি জাহাজে অস্ত্র পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, ২৬ মার্চের পূর্বেই এ অস্ত্রের লাইসেন্স মঞ্জুর করা হয়েছিল।
ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গলেন স্টোনকে দু’বার তলব করে। পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউল সতর্ক করে বলেন, "পাকিস্তানকে অস্ত্র দেওয়া হলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটবে। ভারত ইতিমধ্যে ৬০ লাখ শরণার্থীর বোঝা বহন করছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বিতর্ক ডেমোক্র্যাট সিনেটর স্টুয়ার্ট সিমিংটন বলেন, "পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো অবৈধ ও নৈতিকতাবিরোধী। এটি পূর্ব বাংলার নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে।" তিনি পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবাবদিহিতা দাবি করেন।
যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেক ডগলাস হিউম কমন্স সভায় ঘোষণা দেন, "পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধান না আসা পর্যন্ত ব্রিটেন পাকিস্তানকে নতুন কোনো সাহায্য দেবে না।"
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, "শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে এক ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে স্পষ্ট বার্তা দেন:
“পূর্ববঙ্গে শান্তি ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই। শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাংলার জাতীয় নেতা। তার সঙ্গেই আলোচনা করতে হবে এবং তাকে মুক্তি দিতে হবে।”
সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত নিকোলাই পেগভ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের বার্তা পৌঁছে দেন এবং বলেন, "সোভিয়েত ইউনিয়ন যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে আছে।"
জুলফিকার আলী ভুট্টোর বক্তব্য পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ইয়াহিয়া খানের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
মাহমুদ আলীর বিদেশ সফর পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মাহমুদ আলী সরকারি দূত হিসেবে "পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি" ব্যাখ্যা করতে বিদেশ সফরে যান।
২৩ জুন মুক্তিবাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে সফল অপারেশন চালায়:
কুমিল্লা: মুক্তিযোদ্ধারা ইয়াকুবপুর ও খৈনলে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৮ জনকে হত্যা করে।
মাদারীপুর: নড়িয়ায় যুদ্ধে ৭-৮ জন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
কুষ্টিয়া: ভেড়ামারায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (৫ম, ১০ম, ১২শ, ১৩শ খণ্ড)
দৈনিক আনন্দবাজার, যুগান্তর, অমৃতবাজার পত্রিকা (২৩-২৫ জুন ১৯৭১)
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন (২২ জুন ১৯৭১)
মন্তব্য করুন