ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

দূষণ বনাম পরিবেশ পুলিশের আবশ্যকতা

মো. খালিদুল হক হাওলাদার
২১ জুন ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
২১ জুন ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
দূষণ বনাম পরিবেশ পুলিশের আবশ্যকতা

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পরিবেশ পুলিশ: ১৮৬১ সালে, আর্চডিকন চার্লস থর্প ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ফার্ন দ্বীপপুঞ্জের কিছু অংশ ক্রয় এবং বিপন্ন সামুদ্রিক পাখি প্রজাতি রক্ষার জন্য একজন ওয়ার্ডেন নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের কাজ ছিল শিকার রক্ষা করা এবং শিকারিদের ধরা। তারা দূষণ থেকে নদীগুলোকে রক্ষা করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। ১৯৬০ সালে, তাদের পদবি ‘সংরক্ষণ কর্মকর্তা’ (ECO) হিসেবে পরিবর্তন করা হয়, তারপর ১৯৭০ সালে, তাদের নাম পরিবর্তন করে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মকর্তা’ রাখা হয়, সংরক্ষণ বিভাগ এবং রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগ একীভূত হয়ে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ’ হয়ে ওঠে। একই সময়ে ভূমিকার মর্যাদা পরিবর্তন করা হয়, যা ECO-গুলোকে পূর্বের তুলনায় আরও বেশি আইনি ক্ষমতা প্রদান করে। আমেরিকায়, সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের ECO-এর জন্য রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাও দিতে হয় এবং পাস করতে হয়। কানাডার ওয়েস্টার্ন কনজারভেশন ‘ল’ এনফোর্সমেন্ট একাডেমি হলো সেই একাডেমি, যেখান থেকে ইউকন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, আলবার্টা, সাসকাচোয়ান এবং ম্যানিটোবাসহ পশ্চিম কানাডায় নিযুক্ত সমস্ত কর্মকর্তাকে তাদের নিজ নিজ এখতিয়ারে অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য স্নাতক হতে হবে। এই কর্মসূচিটি ছয় মাসব্যাপী, যার মধ্যে প্রায় দুই মাস সরাসরি তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে কর্মস্থলে প্রশিক্ষণ হিসেবে ব্যয় করা হয়। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে পোশাক এবং আচরণ, তদন্ত, আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনা, বল প্রয়োগ, দ্রুত জলে উদ্ধার, অফ-রোড যানবাহন ব্যবহার, অনুসন্ধান ওয়ারেন্ট আবেদন এবং কার্যকর করণ এবং আরও অনেক কিছু।

পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা: পরিবেশবিষয়ক অপরাধসমূহ দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ বালি উত্তোলন, জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি, পাহাড় কাটা, বন উজাড়, বন্যপ্রাণী শিকার, মৎস্যসম্পদ বিনষ্ট এখনকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বড় বড় নদীসমূহকে শিল্প বর্জ্য থেকে রেহাই দেওয়া যাচ্ছে না। এ সব কার্যকলাপ শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করছে না, জনস্বাস্থ্য ও কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গৃহস্থালির বর্জ্য, শিল্প বর্জ্য, রাসায়নিক বর্জ্য ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থের কারণে দেশের বৃহৎ নদীসমূহ দিনে দিনে দূষিত হয়ে যাচ্ছে। কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও সামগ্রিক পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন শহরে আজ বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে উঠেছে বায়ুদূষণ। শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলাবলি, এমনকি রান্নাঘর থেকে নির্গত ধোঁয়া সবই বায়ুর মান খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ তৈরি হয়ে জনজীবন বিপন্ন করছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যপ্রাণীর অবৈধ শিকার জীববৈচিত্র ও ভারসাম্য নষ্ট করছে। এতে পরিবেশ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘিত হচ্ছে। এনভায়রনমেন্টাল পুলিশ ইউনিট গঠন এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে একটি এনভাইরনমেন্টাল পুলিশ ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এ বাহিনী অপরাধ দমনে নিয়মিত টহল দেবে। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি চালাবে। পাশাপাশি তুলে ধরবে পরিবেশগত অপরাধের নেতিবাচক প্রভাবগুলো। উৎসাহিত করবে পরিবেশবান্ধব আচরণগুলোকে। পুলিশ সংস্কার কমিশন একটি জনবান্ধব এনভায়রনমেন্টাল পুলিশ ইউনিটের প্রস্তাব পাস করিয়ে তা তৈরিতে পজিটিভ ভূমিকা পালন করে দেশকে আরেকটু এগিয়ে নিতে পারে।

বাংলাদেশ অনুন্নত বিশ্বের একটি দেশ। জনসংখ্যার ভারে পীড়িত ও প্রাকৃতিক সম্পদে দীন এ দেশটির পরিবেশ দূষণ এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সমগ্র বিশ্বের পরিবেশবাদী আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্ম হওয়া দরকার। সম্প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ জরুরি যোগাযোগ হটলাইন চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার; যার মাধ্যমে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যে কোনো ঘটনা তারা সরাসরি জানাতে পারবে এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা পাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের পক্ষ থেকে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পুলিশ সংস্কার কমিশনকে। এতে বলা হয়, এনভায়রনমেন্টাল পুলিশ ইউনিট গঠন সময়ের দাবি। কারণ, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, অবৈধভাবে বন নিধন, নদীদূষণ এবং বন্যপ্রাণী পাচার দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুতর সংকট তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ পুলিশ গঠন একটি রাষ্ট্রের সফল বিনিয়োগ হবে।

লেখক: সিইও, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব-২

প্রথম প্রকাশ: কালবেলা, ১৬ জুন ২০২৫

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০