ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

রিয়াছত আলী

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
রিয়াছত আলী
রিয়াছত আলী

পেশা শিক্ষকতা হলেও কাব্যচর্চা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন সুনামগঞ্জের রিয়াছত আলী। আসামের গৌড়বঙ্গ সাহিত্য পরিষদ তাঁকে দিয়েছিল কবিরত্ন উপাধি। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজ ও প্রগতিশীল রাজনীতিতেও যুক্ত ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর এলাকার যুবকদের যুদ্ধে অংশ নিতে উৎসাহিত করতেন। এ কারণে স্থানীয় রাজাকাররা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একাত্তরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে রাজাকারের দল তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে গুলি করে হত্যা করে। রক্তাক্ত লাশ উঠানে ফেলে রেখে যায়।

রিয়াছত আলীর জন্ম ১৯৩২ সালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামে। বাবা এজাবত আলী, মা পরিজান বিবি। সিলেটের এইডেড স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৬১ সালে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৬৪ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএড করেন। এরপর তিনি ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

শহীদ রিয়াছত আলী রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপের (ভাসানী) প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সিলেটে থাকাকালে তিনি কচিকাঁচার আসরের প্রতিষ্ঠাতা জেলা সভাপতি ছিলেন। শহরে যে বাসায় তিনি থাকতেন, সেটির নাম ছিল শিল্প আশ্রম। এই বাসায় তাঁর ব্যবস্থাপনায় এলাকার শিশু-কিশোরেরা গান ও ছবি আঁকা শিখত। তিনি কবিতা, গান ও প্রবন্ধ লিখতেন।

১৯৫৪ সালে ঢাকায় যুক্তফ্রন্টের বিভাগীয় সম্মেলনে সিলেট বিভাগ থেকে ছয় ছাত্রনেতা আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রিয়াছত আলী একজন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় তাঁর গান সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভায় গাওয়া হতো। সিলেটের শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সিলেট গ্রন্থে রিয়াছত আলীর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবীকোষ গ্রন্থে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী রয়েছে।

রিয়াছত আলীর ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. চান মিয়া জানান, তিনি নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় যুদ্ধে যান। রিয়াছত আলীর প্রেরণায় তাঁদের স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ১১ জন ছাত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, রিয়াছত স্যার ছিলেন আলোকিত মানুষ। রাজাকাররা তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।

রিয়াছত আলীর স্ত্রী জমিলা খাতুনও মইনপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও পরে সিলেটের আম্বরখানা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। মেয়ে আনারকলি যুক্তরাজ্যে থাকেন। ছেলে কামাল আহমেদ কানাডা থেকে ফোনে প্রথম আলোকে জানান, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মায়ের কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, বাবার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবীর সরকারি তালিকায় ওঠেনি।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৯ জুলাই ১৯৭১: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রতিরোধের গৌরব

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা: আনোয়ারার রক্তাক্ত ৭ জুলাই ১৯৭১

সরিষাবাড়ি ও পাতপাড়া গ্রাম গণহত্যা: জামালপুরের বীরত্ব ও বেদনা

বান্দাইখাড়া গণহত্যা: নওগাঁর আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা

বরুণা বাজার গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর নির্মম অধ্যায়

চেঁচুড়ি গণহত্যা: জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এর নির্মম ঘটনাবলি

খলশি গণহত্যা: জুলাই-নভেম্বর ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

কালীনগর গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

৭ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সিদ্ধান্তমুখর দিন

মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সদিচ্ছার অভাব

১০

মব সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ দেশ

১১

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

১২

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম মব সন্ত্রাস

১৩

৫ জুলাই, ১৯৭১: মুজিবনগরে গণপ্রতিনিধিদের ঐতিহাসিক বৈঠক

১৪

২ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

১৫

মিট্টিকুলাস পুলিশ হত্যা

১৬

১ জুলাই ১৯৭১: ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমাধান প্রত্যাখ্যান

১৭

ধামুসা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর)

১৮

৩০ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট

১৯

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা দেশ কখনোই সভ্য হতে পারে না

২০