ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

এ কে এম সিদ্দিক বিশ্বাস

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
০২ জুন ২০২৫, ০৫:৩৮ পিএম
২০ আগস্ট ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম
এ কে এম সিদ্দিক বিশ্বাস

একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর। চারদিক সুনসান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এমনিতেই মানুষের চলাচল কম, তার ওপর শীতের কারণে সন্ধ্যার পরপরই সবাই ঘরে ঢুকে পড়েন। মাঝেমধ্যে ডেমড়ার দিক থেকে ভেসে আসে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শেলিংয়ের শব্দ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিয়ে চারদিকে গুঞ্জন। এ পরিস্থিতিতে রাত আটটার দিকে পুরান ঢাকার চণ্ডীচরণ বোস স্ট্রিটের বাড়ি থেকে আইনজীবী এ কে এম সিদ্দিক বিশ্বাসকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর আলবদররা।

পরে ঢাকার বিভিন্ন থানা, হানাদার সেনা ক্যাম্পসহ অনেক জায়গায় খোঁজ করেও স্বজনেরা তাঁর সন্ধান পাননি। পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী ও পাকিস্তান সরকারের প্রকাশ্যে কড়া সমালোচনা করতেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধেও সহযোগিতা করতেন। সে কারণেই পরাজয়ের অব্যবহিত আগের নীলনকশা অনুসারে খ্যাতিমান এই আইনজীবীকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় আলবদররা।

পুরো নাম আবুল খায়ের মোহাম্মদ সিদ্দিক বিশ্বাস। ১৯২৩ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা আবদুল লতিফ বিশ্বাসও ছিলেন খ্যাতিমান আইনজীবী ও কৃষক প্রজা পার্টির প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজস্বমন্ত্রী (১৯৫৪), কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী (১৯৫৫-১৯৫৬) ছিলেন। মা উম্মে সাহারা খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সিদ্দিক বিশ্বাস ছিলেন বড়।

শহীদ সিদ্দিক ১৪ ডিসেম্বর ঢাকার চণ্ডীচরণ বোস স্টিটের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন মিলে টেলিভিশনে খবর দেখছিলেন। রাত আটটার দিকে দোতলা বাড়ির ফটকের সামনে বদর বাহিনীর একটি গাড়ি এসে থামে। ঘাতক বাহিনীর সাত-আটজন সদস্য বাড়ির দোতলায় ঢুকেই সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এ কে এম সিদ্দিকের ছবি ও তথ্য পাঠান। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইতে এবং আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ বইতে এ কে এম সিদ্দিকের জীবনী রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও মেজ ছেলে ব্যবসায়ী এ কে এম মর্তুজা ঢাকায় বসবাস করছেন। বড় ছেলে অধ্যাপক তৈয়বুর মাহমুদ এবং ছোট ছেলে সরকারি চাকরিজীবী এ কে এম তারিক মারা গেছেন।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ সিদ্দিকের ছোট ভাই আবদুল আলিম বিশ্বাস বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাসংগ্রামে তাঁর ভাইয়ের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অথচ তিনি প্রাপ্য স্বীকৃতি ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁর ভাইয়ের নামে ঢাকা বারের উদ্যোগে সিদ্দিক হল নামে একটি মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০