

০৫ আগস্ট ২০২৪, অনেকে বলে ৩৬ জুলাই! সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে ঘটে গেল এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান। রাস্তায় নেমে এল সব মানুষ—ছাত্র, জনতা, সবাই। দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান হলো শেখ হাসিনার। সেনা ও বিমানবাহিনীর পাহারায় তিনি বিদেশে চলে গেলেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় তখন কেউই ছিল না। সেনাপ্রধান ঘোষণা দিলেন, শিগগিরই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসলেন। ঘোষণা করা হলো, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। অধিকাংশ মানুষই উৎসাহিত হলেন। ভাবলেন এবার কিছু একটা পরিবর্তন হবে।
তিনি উড়ে এলেন ফ্রান্স থেকে। তিন দিন সরকারবিহীন রাষ্ট্রে তাঁরা শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রফেসর ইউনুসের খ্যাতি সবাই জানেন। তারপরও তিনি জানিয়ে দিলেন, তিনি বড় মাঠের খেলোয়াড়। তিনি যা বলবেন তাই শুনতে হবে, নইলে তিনি চলে যাবেন—অনেকটা মেসি, নেইমার, রোনাল্ডোর মতো। করলেনও তাই। নিজ ইচ্ছামত উপদেষ্টা নিয়োগ করলেন। সবাই বলে এটা NGO-gram সরকার।
এরপর শুরু হলো বিদেশ থেকে লোক আনা। লামিয়া মোর্শেদ, রজার রহমান, আলী রিয়াজ, আশিক চৌধুরী, লুৎফে সিদ্দিকী, তৈয়ব, সুফি—আরও কত জন যে এলেন! এঁরা সবাই মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ইত্যাদি পদে বসলেন। এঁরা সবাই কিন্তু বিদেশি থুক্কু -দেশি। তবে, দেশি হলেও থাকেন অনেক বছর থাকেন বিদেশে, প্রায় সবাই বিদেশের নাগরিক। দেশে বছরের পর বছর থাকেন না, তবু দেশের টানে চলে এসেছেন! কী দেশপ্রেম!!! শুরু হলো ‘ইউনুস কোম্পানি’র শাসন।
খলিলুর রহমান? আগে এই নাম কেউ শুনেছেন? আমেরিকায় তিনি রজার রহমান, বাংলাদেশে খলিলুর রহমান। প্রথমে পদবি ছিল রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ। কিছুদিন পরেই হয়ে গেলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা—এমন পদ আগে বাংলাদেশে কখনো ছিল না। তাই দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি ছড়ি ঘুরাতে শুরু করলেন তিন বাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—সর্বত্র। মনে হয় তিনিই চালাচ্ছেন দেশ। করিডর, পোর্ট দেওয়া-নেওয়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে দহরম-মহরম। এর সঙ্গে কিছু বিপজ্জনক কাজও করেছেন, যা চোখে পড়েছে ভারত, আমেরিকা ও রাশিয়ার।
মাঝখানে সেনাপ্রধান হুংকার দিলেন— ‘Enough is enough’, ‘No bloody corridor’। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, ১ জানুয়ারি থেকে নতুন সরকার। সাব্বাস, এই না হলে আর্মি। ওয়াকার ভাই জিন্দাবাদ! কিন্তু, ওয়াকার ভাই, ডিসেম্বর তো চলছে। কই, নির্বাচন তো দেখছি না! বরং চারদিকে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা দেখছি। প্রস্তুতির কথাও শুনছি।আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তো বারবার দৌড়াচ্ছেন দোহায়—কখনো ক্ষমা চাইতে, কখনো সময় চাইতে। এভাবে আর কত দিন?
এখন তাঁকে চালাচ্ছেন অজিত ডোভাল, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। একটা যুদ্ধ কি লাগাতেই হবে? অবশ্য আমাদের নোবেল মানব ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বলেছিলেন—ভারতের সেভেন সিস্টার্স, কলকাতা, মায়ানমার—সর্বত্র অস্থির করে তুলবেন। বঙ্গোপসাগরের অভিভাবক হিসেবে চীনকে অনেক ‘বাণিজ্যিক উপদেশ’ও দিয়ে এসেছেন। কারণ তিনি তো বাণিজ্যেরই মানুষ।
তাহলে এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে—ইউনুস, ডোভাল, না রজার?
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মন্তব্য করুন