

দাবার খেলার কিছু নিয়ম আছে। সঙ্গে আছে কিছু কৌশল। রাজনীতিতে এর বাইরেও আছে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—সেটা হচ্ছে নীতি। কিন্তু ইদানীং রাজনীতিতে কৌশলই হয়ে যাচ্ছে প্রধান। নীতির কথা পরে চিন্তা করা যাবে। আগে ক্ষমতা, পরে সব কথা..... আর কৌশলের নামে চলছে ভণ্ডামি।
তা না হলে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতার জন্য হিন্দু প্রার্থী ধরে আনে? আর কৃষ্ণ মশায়ই বা কীভাবে জামায়াতে ইসলামীর জন্য ভোট চাইবেন। ক্ষমতার লোভে ইসলামই ছেড়ে দেয় কি না কে জানে! জেতার জন্য হয়তোবা দলের নাম বদলে জামায়াতে জনতা রেখে দেবে। তাও যদি নির্বাচনে জেতা যায়!
যেই নারীসমাজকে অন্দরে ঢোকানোর লক্ষ্যে শরিয়া আইনের ঘোষণা, সেই নারীসমাজকেই নির্বাচনের প্রচারণায় নামিয়ে দিয়েছে। এগুলো কৌশল না, বরং প্রতারণা এবং ভণ্ডামি!
অন্যদিকে প্রধান খেলোয়াড় দিচ্ছেন নতুন নতুন চাল। উনি একজনের সঙ্গে দেখা করার জন্য উড়াল দিলেন লন্ডনে। বললেন, “তোমার বাবার ডাকেই আমি মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হয়েছিলাম।” “তুমি চলে আস—বিমানবন্দরে আমি স্বাগত জানাব।”
বশীকরণ প্রক্রিয়া কাজে দিল। মির্জা ফখরুল তো উনার মধ্যে জিয়ার প্রতিচ্ছবি দেখতে শুরু করলেন। কথা হয়ে গেল—তোমরা ক্ষমতায়, আমি রাষ্ট্রপতি।
এদিকে তারেকের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে নানা বাধা তৈরি করে রেখেছেন। অন্যদিকে সেনা দিবসে আলিঙ্গন করে ছয়বার চুমু খেলেন আমীরের। শুধু গালে নয়, ঠোঁটেও। সবই ক্ষমতার রসায়ন। উনি সবাইকে বলছেন, “আমি তো আপনাদেরই লোক।”
উনি আমেরিকায় এবং সারা বিশ্বে প্রচার করে আসলেন—আমার নিয়োগকর্তা ছাত্ররা। ওরা একটা দল করুক, আমি তো আছিই। চেষ্টাও করলেন। কিন্তু একে একে সব নিয়োগকর্তা চলে গেল। এমনকি ঘোষিত মাস্টারমাইন্ডও উনি চলে গেল। কিন্তু উনি বহাল তবিয়তেই আছেন।
কিন্তু মুসকিল তো আসল নিয়োগকর্তাকে নিয়ে। ওনারা তো বহুদূরে—আমেরিকায়। তার ওপর নির্বাচনে জিতে গেল ট্রাম্প। হিলারি ক্লিনটনের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কি জলে গেল?
সদর্পে ঘোষণা দিলেন, “ট্রাম্প ইজ আ ডিল মেকার, আমিও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়, একটা ডিল করে খেলব।” করলেনও তাই—ধরলেন ইলন মাস্ককে। তিন মাসের মাথায় স্টারলিংক বসিয়ে দিলেন সীমান্ত অঞ্চলে। কিন্তু বিধি বাম—ট্রাম্প আর মাস্কের সম্পর্ক গেল ভেঙে। শুরু হলো প্ল্যান ‘বি’—ধর জাতিসংঘকে। নিয়ে এলেন জাতিসংঘের মহাসচিবকে, ইস্যু একটা পাওয়া গেল—রোহিঙ্গা। ধরলেন রজার রহমান ওরফে খলিলুর রহমানকে। প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা-বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ পদ দিয়ে নিয়ে এলেন। সরাসরি তাঁদের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে গেলেন। মাথায় টুপি দিয়ে, ইফতার করে ঘোষণা দিলেন—আগামী ঈদ আপনারা রাখাইনে করবেন। একেই বলে ইউনুস ম্যাজিক!
এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু করলেন শেখ হাসিনা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি ওদের সঙ্গেও কথা বলতে হয়—ওদের মাথার ওপর ঝুলে থাকুক একটা খড়্গ। কিন্তু আসল নিয়োগকর্তার সঙ্গে লাগবে ডিল। অবশেষে ডিল হলো—পোর্ট, সেন্ট মার্টিন, গম কেনা আর অস্ত্র কেনা।
কিন্তু এরই মধ্যে কেমন যেন অন্য হাওয়া বইতে শুরু করল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ, এমনকি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পর্যন্ত বেঁকে বসেছে। দিল্লির অজিত ডোভালও ধমক দিচ্ছে খলিলকে। সব মিলিয়ে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন একটা ঘোষণা করতেই হবে। পরে হোক না হোক, দেখা যাবে। পেছানোর সুযোগ পাওয়া যাবে ১০১টা। আর কিছু না হলে সেভেন সিস্টার্স তো আছেই। উসকানি দিয়ে উত্তেজনা শুরু করতে আর কতক্ষণ? তফসিল ঘোষণার পরদিনই শুরু হলো রাজনৈতিক গোলাগুলি। এটা কত দূর নেওয়া যায়, দেখা যাক।
ইতিমধ্যে উনি আবার যাচ্ছেন নিয়োগকর্তার কাছে। এবারের ঝুলিতে আছে বঙ্গোপসাগর আর রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়ালসহ আরও অনেক কিছু। এই ডিলটা সারতে পারলে চাকরি নিশ্চিত হবে। ৫, ১০ অথবা ৫০ বছর থাকতে হবে তো!
আন্তর্জাতিক দাবা খেলোয়াড়দের নার্ভ কত শক্ত হয়, এবার কিছু টের পাচ্ছি। এরই মধ্যে আবার নির্বাচন পেছানোর কত নাটক চলে আসতে পারে কে জানে। তবে সুখের কথা—এ পর্যন্ত সবগুলো নাটকেরই স্ক্রিপ্ট ছিল খুব দুর্বল। সবার চোখে ধরা পড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত উনি কীভাবে ধরা খাবেন জানি না—অপেক্ষায় থাকি।
মন্তব্য করুন