আন্দুলিয়া গণহত্যা ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। ডুমুরিয়া সদর থেকে সড়কপথে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে রঘুনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আন্দুলিয়া গ্রামে এই নৃশংসতা ঘটে। মজিদ বাহিনীর সঙ্গে রুদাঘরার রাজাকারদের একাধিক যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা গ্রামে প্রবেশ করে গণহত্যা চালায়। এতে ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হন। গণহত্যার পাশাপাশি হানাদাররা ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়ে গ্রামটিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।
পটভূমি ও ঘটনার বিবরণ
সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রুদাঘরার একটি রাজাকার দল বরুণা গ্রামে লুটপাট চালায়। লুটের মালামাল একটি ট্রাকে ভর্তি করে তারা আন্দুলিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মজিদ বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল তাদের প্রতিরোধ করে। মজিদ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা আন্দুলিয়ার ডা. দুলাল চন্দ্রের বাড়ির ছাদ থেকে রাজাকারদের ট্রাকে বোমা নিক্ষেপ করেন, যাতে ৩ জন রাজাকার নিহত হন।
এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আন্দুলিয়ায় আক্রমণ চালায়। তারা দৌলতপুর থেকে শাহপুর বাজার হয়ে গাড়িতে গ্রামে প্রবেশ করে। তীব্র বৃষ্টির কারণে কাঁচা ও কর্দমাক্ত রাস্তায় গাড়িগুলো গাজী বাড়ির কাছে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে আটকে যায়। এ অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে তারা এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। ভীত-সন্ত্রস্ত গ্রামবাসীরা দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বিলে আশ্রয় নেয়। এদিন পাকসেনারা অমূল্য চৌকিদার ও বিহারীলাল মণ্ডলকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর পাকসেনা ও স্থানীয় রাজাকাররা বিভিন্ন বাড়ি থেকে লোকজনকে ডেকে এনে কাদা থেকে গাড়ি তুলার ব্যবস্থা করে।
২৬ সেপ্টেম্বর জামিরা রাজাকার ক্যাম্পের একটি বড় দল অতর্কিতে আন্দুলিয়া গ্রাম আক্রমণ করে। এদিন তারা বেশ কিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং সমস্ত গ্রামকে তছনছ করে দেয়। রাজাকারদের গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন।
শহীদ ব্যক্তিদের তালিকা
আন্দুলিয়া গণহত্যায় শহীদ ১৭ জনের নাম জানা গেছে। তারা সকলেই ছিলেন আন্দুলিয়া গ্রামের অধিবাসী। শহীদেরা হলেন:
সূত্র
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ১ম খণ্ড [দিব্যদ্যুতি সরকার]
মন্তব্য করুন