ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা ১৯৭১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হয়। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার বারইপটল ইউনিয়নের ফুলদহেরপাড়া গ্রামে এই গণহত্যা ঘটে, যা জামালপুর জেলার অন্যতম নৃশংস ঘটনা হিসেবে পরিচিত। এতে বহু সাধারণ মানুষ নিহত হন এবং নিহতদের গ্রামেই গণকবর দেওয়া হয়।
পটভূমি ও ঘটনার বিবরণ
ফুলদহেরপাড়া গ্রামের মানুষেরা কাদেরিয়া বাহিনীর হুমায়ুন কোম্পানির শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা একযোগে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ও পিংনায় অবস্থিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং রাজাকার-আলবদরদের ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু আলবদর নেতা রুস্তুম আলী ও আয়ুব আলীর কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের শিকার হন।
আলবদর নেতা রুস্তুম আলী ও আয়ুব আলী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে পাকহানাদার বাহিনীকে অবহিত করেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণের আগেই পাকবাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা তিন দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে এবং অতর্কিত গোলাবর্ষণ শুরু করে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ওরফে ইতিম আলীকে কভারিং ফায়ারের দায়িত্বে রেখে পুরো কোম্পানিকে উইথড্র করা হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলামের গুলি ফুরিয়ে যায় এবং তিনি যুদ্ধে শহীদ হন। পরে পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকার-আলবদররা গ্রামে হামলা চালিয়ে বহু বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে এবং গ্রামের সমস্ত সম্পদ লুট করে। নিহতদের গ্রামে গণকবর দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে স্থানীয় জনগণ এই স্থানটিকে শহীদনগর নাম দেন। প্রতিবছর ২৫ সেপ্টেম্বর শহীদনগর দিবস পালন করা হয়।
সূত্র
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৬ষ্ঠ খণ্ড [এ এইচ এম মাছুদুর রহমান]
মন্তব্য করুন