ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

খাজা আবদুস সাত্তার

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম
খাজা আবদুস সাত্তার
খাজা আবদুস সাত্তার

এক যুগের বেশি সময় ধরে নওগাঁর মহাদেবপুরে শিক্ষকতা করেছেন খাজা আবদুস সাত্তার। রাজনীতিও করতেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে কিছুদিন কাজ করেছেন খুলনার খালিশপুরে পিপলস জুট মিলে। তবে নওগাঁয় তিনি শিক্ষক হিসেবেই পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খুলনায় পাটকল শ্রমিক ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতেন। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠাতেন। স্থানীয় অবাঙালিরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। তারা পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের নিয়ে হামলা করে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, দুই কন্যাসহ আবদুস সাত্তারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে খাজা আবদুস সাত্তার সম্পর্কে তথ্য ও ছবি পাঠান নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা-আল-মেহমুদ রাসেল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তরুণ এই গবেষকের রক্তঋণ ১৯৭১: নওগাঁ ও গণহত্যা ১৯৭১: নওগাঁ নামে দুটি মাঠপর্যায়ের গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে। রক্তঋণ ১৯৭১: নওগাঁ বইয়ে খাজা আবদুস সাত্তারকে নিয়ে তথ্য রয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।

শহীদ খাজা আবদুস সাত্তারের জন্ম ১৯৩৩ সালে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার শালবাড়ি গ্রামে। বাবা ফয়েজ উদ্দিন ও মা সায়রা বানু। তাঁরা দুই ভাই ও দুই বোন। তিনি ১৯৫১ সালে নওগাঁ বিএমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বিয়ে করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ক্যাপ্টেন ইসমাইল হোসেনের বড় মেয়ে জাহানারা বেগমকে। তাঁদের তিন মেয়ে। মেজ ও ছোট মেয়ে হেলেনা ও তনিমাকে মা-বাবার সঙ্গে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বড় মেয়ে সুরাইয়া বেগম নওগাঁয় নানার বাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।

আবদুস সাত্তার কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতা দিয়ে। ১৯৫৩ সালে মহাদেবপুরের ধনজইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি খুলনার পিপলস জুট মিলে চাকরি নেন। শহীদ সাত্তার ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। পাটকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হন। খুলনায় তরুণ ও পাটকল শ্রমিকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতেন।

স্ত্রী-সন্তানসহ আবদুস সাত্তারকে হত্যার বীভৎস ঘটনা জানান তাঁর শ্যালিকা মমতাজ বেগম। তিনি বলেন, দুই মেয়ে ছয় বছরের তনিমা ও ছয় মাসের হেলেনা জুট মিল কলোনির বাসায় মা-বাবার সঙ্গে থাকত। একাত্তরের ২৭ এপ্রিল মাগরিবের নামাজের কিছু পরে দুলাভাইয়ের বাসায় কিছু অবাঙালি ও একদল পাকিস্তানি সেনা হামলা করে। তারা বাসার দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। আপা চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁকে ছোট দুই মেয়েসহ খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে দুলাভাই দরজা আগলে ছিলেন। হানাদাররা দরজা ভেঙে ঢুকে প্রথমেই তাঁকে গুলি করে। দুলাভাইয়ের চিৎকার শুনে আপা ও ছোট দুই মেয়ে বের হয়ে আসে। বর্বর সেনারা তাদেরও গুলি করে হত্যা করে। পরে জুট মিলের শ্রমিকেরা খালিশপুরেই তাঁদের কবর দেন। খবর পাওয়ার পর আব্বা খুলনায় গিয়ে শ্রমিকদের কাছে সন্তানসহ আপা-দুলাভাইকে হত্যার কাহিনি শোনেন।

শহীদ শিক্ষক আবদুস সাত্তারের আত্মদানের কথা মনে রেখেছে এলাকাবাসী। ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি চেরাগপুর-শালবাড়ি-বালুভরা সড়কের নামকরণ করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবদুস সাত্তার সড়ক

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৯ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন

বাগেরহাটের কান্দাপাড়া পৈশাচিক গণহত্যা

পাগলা দেওয়ান মসজিদ গণহত্যা

১৮ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিন ও কান্দাপাড়ার পৈশাচিক গণহত্যা

১৭ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

১৬ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও যুদ্ধের মোড় পরিবর্তন

বাজেট ২০২৫-২৬ / বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে

নগদের মাধ্যমে সরকারি ভাতার ১৭১১ কোটি টাকা গায়েব!

বাজেট ২০২৫-২৬ / ফরমায়েশের ঝাঁপি, বোঝা বাড়ার ভয়

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নির্দেশনা নেই / শিল্প-ব্যবসায় করের বোঝা বাড়ল

১০

মূল্যস্ফীতি ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব

১১

মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা, বাড়বে সংসার খরচ

১২

সংস্কার নাকি অপচয়? / নতুন নোটের পেছনে ২০ হাজার কোটি টাকার গল্প

১৩

৩ জুন, ১৯৭১: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ঘটনাবলি

১৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী / এ কে এম সিদ্দিক বিশ্বাস

১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী / কোরবান আলী

১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী / শান্তিময় খাস্তগীর

১৭

শহীদ বুদ্ধিজীবী / এ কে এম মনিরুজ্জামান

১৮

১০ বছরে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ, স্থবির অর্থনীতি

১৯

২ জুন ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন

২০