ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

আবুল কাশেম মণ্ডল

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
আবুল কাশেম মণ্ডল

আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে বেশ সুনাম ছিল আবুল কাশেম মণ্ডলের। পাশাপাশি ভালো অভিনয় ও নাট্য পরিচালনা করতেন। গত শতকের ষাটের দশকে নওগাঁয় নিয়মিত নাট্যোৎসবের আয়োজন করতেন আবুল কাশেম। স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন সোচ্চার। মুক্তিযুদ্ধের জন্য তরুণদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন। গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে একাত্তরের ২৪ জুলাই শহীদ হন এই নাট্যজন ও আবৃত্তিশিল্পী।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে আবুল কাশেম মণ্ডল সম্পর্কে তথ্য ও ছবি পাঠান নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা-আল-মেহমুদ রাসেল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তরুণ এই গবেষকের মাঠপর্যায়ে গবেষণাগ্রন্থ রক্তঋণ ১৯৭১: নওগাঁতে আবুল কাশেমকে নিয়ে তথ্য রয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।

আবুল কাশেমের জন্ম ১৯৩২ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার চকবুলাকি গ্রামে। বাবা জমির উদ্দিন মণ্ডল ও মা কদভান বিবি। ১৯৪৮ সালে নওগাঁর সরকারি কে ডি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শৈশব থেকেই অভিনয় ও আবৃত্তির প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। কারমাইকেল কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি আবৃত্তি ও নাটকের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখতেন এবং উপস্থাপনাও করতেন। পরে তিনি তাঁর নিজ এলাকায় নিয়মিত নাট্যোৎসব ও ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন করতেন। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী সাদিকা বানু ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

পেশাগত জীবনে শহীদ আবুল কাশেম মণ্ডল ছিলেন গণপূর্ত বিভাগের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বগুড়ায় কাজ করতেন। একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি অফিস ত্যাগ করেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বৈঠাখালি গ্রামে আশ্রয় নেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ওই এলাকায় বিখ্যাত মণ্ডলবাড়ি হিসেবে পরিচিত। আবুল কাশেম বৈঠাখালি গ্রামে তাঁর অপর দুই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সহযোগী নাট্য সংগঠক আখতারুজ্জামান মণ্ডল ও চিকিৎসক আহাদ আলী সরদারকে নিয়ে মণ্ডল বাড়ির লাইসেন্স করা পাঁচটি বন্দুক দিয়ে স্থানীয় তরুণদের প্রাথমিকভাবে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন।

স্থানীয় রাজাকাররা পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের এই খবর জানিয়ে দেয়। একাত্তরের ২৪ জুলাই সকালে ৬০-৭০ জন হানাদার সেনা ভারী অস্ত্রপাতি নিয়ে বৈঠাখালি গ্রামে হামলা চালায়। তাদের গোলাগুলিতে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমন সময় আবুল কাশেম, আখতারুজ্জামান ও আহাদ আলী বন্দুক নিয়ে হানাদার সেনাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওদের আধুনিক অস্ত্রের মুখে টিকতে না পেরে সরে আসার চেষ্টা করেন। তবে সফল হননি। পাকিস্তানি ঘাতক সেনারা তাঁদের তিনজনসহ বৈঠাখালি গ্রামের ১০ জন মুক্তিকামী মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।

আবুল কাশেমের ছেলে আশিকুজ্জামান বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর বাবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। উনসত্তরের গণআন্দোলন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হন। হানাদার সেনাদের হামলায় তাঁর বাবা, মামাসহ গ্রামের ১০ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হন। হানাদার সেনারা তাঁর নানাবাড়িসহ গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা আবুল কাশেমসহ বৈঠাখালি গ্রামের অপর শহীদের স্মরণে রেখেছেন। তাঁদের নাম উৎকীর্ণ করে গ্রামে তৈরি করা হয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। এ ছাড়া আত্রাই উপজেলা সদরে সরকারিভাবে নির্মিত শহীদ স্মৃতিস্তম্ভেও শহীদ আবুল কাশেম মণ্ডলের নাম রয়েছে।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০