ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

শাখাওয়াৎ হোসেন

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
শাখাওয়াৎ হোসেন

যশোর সদর হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিচ্ছিলেন চিকিৎসক শাখাওয়াৎ হোসেন। পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের পদলেহী রাজাকারদের কাছে এটি ছিল মারাত্মক অপরাধ। হাসপাতাল চত্বরেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করে সেখানে মাটিচাপা দেওয়া হয় লাশ। ঘটনাটি ঘটেছিল একাত্তরের ৫ এপ্রিল।

শহীদ শাখাওয়াৎ হোসেনের জন্ম ১৯১৮ সালে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বানিয়াখালি গ্রামে। তাঁর বাবা ইউসুফ আলী ব্যবসায়ী, মা বিনোদা বিবি গৃহিণী। কলকাতার নীলরতন মেডিকেল কলেজ থেকে এলএমএফ পাস করে সেই হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শাখাওয়াৎ হোসেন।

পরে পাকিস্তান সরকারের চাকরি নিয়ে নড়াইল, মাগুরা, খুলনা ও সর্বশেষ যশোর সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন। যশোর শহরেই সেনানিবাসের অদূরেই সপরিবার থাকতেন। স্ত্রী তাহেরা খাতুন আর তিন মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে শাখাওয়াৎ হোসেনের সচিত্র জীবনী রয়েছে। এ ছাড়া সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ বইতেও তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং তাঁর বড় ছেলে মকবুল হোসেনের একটি স্মৃতিচারণা রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ স্টাডি গ্রুপের বাংলাদেশে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রকাশিত পুস্তিকাতেও শহীদ শাখাওয়াৎ হোসেনের হত্যার তথ্য রয়েছে।

শাখাওয়াৎ হোসেন যুক্ত ছিলেন রেডক্রসের সঙ্গেও। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দারুণ উজ্জীবিত হয়েছিলেন তিনি। স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর ছেলে মকবুল হোসেন লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পর তিনি পরিবারের সবাইকে বলে দেন আমার আশা ছেড়ে দাও। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। আমার যা কিছু আছে সব দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ব। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি পরিবারের সবাইকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

বাবার নিরাপত্তার কথা ভেবে মেয়েরা লাল রঙের ফিতা দিয়ে শাখাওয়াৎ হোসেনের শার্টের হাতে একটি রেডক্রস তৈরি করে দিয়েছিলেন। শাখাওয়াৎ হোসেন সেই শার্ট গায়ে দিতেন। হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক-কর্মচারীই চলে গিয়েছিলেন। অল্প কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে তিনি চিকিৎসাসেবা চালু রেখেছিলেন। তিনি মূলত গোপনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং ইপিআরের বাঙালি সদস্যদের জরুরি অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসাসেবা দিতেন। রাজাকাররা বিষয়টি হানাদার বাহিনীকে জানিয়ে দেয়। বিহারি রাজাকার দরিয়া খানকে নিয়ে একদল পাকিস্তানি সেনা ৫ এপ্রিল যশোর সদর হাসপাতালে ঢোকে। তারা চিকিৎসক শাখাওয়াৎ হোসেনসহ চার-পাঁচজন কর্মচারীকে হাসপাতাল চত্বরে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।

শাখাওয়াৎ হোসেন শহীদ হওয়ার খবর পেয়ে তাঁর স্ত্রী তাহেরা খাতুন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। একসময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭৪ সালে মারা যান তিনি। শাখাওয়াৎ হোসেনের ছেলেমেয়েরা তাঁর বাবার নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেটি জাতীয়করণ হয়েছে। নাম রাখা হয়েছে শহীদ শাখাওয়াৎ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সন্তানদের আক্ষেপ, তাঁদের বাবা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও কোনো সরকারি স্বীকৃতি পাননি।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০