ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

নরেন্দ্রনাথ কুন্ডু

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
নরেন্দ্রনাথ কুন্ডু

নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর পরিবারের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভালো যোগাযোগ ছিল। আশ্রয় দেওয়া ছাড়াও নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতেন তিনি। সে কারণে রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুসহ এই পরিবারের তিন সদস্যকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার সেনারা।

শহীদ নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর জন্ম ১৯১২ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে। তাঁর বাবা নলিনীকান্ত কুন্ডু ছিলেন জোতদার ও ব্যবসায়ী, মা গৌরীসুন্দরী কুন্ডু গৃহিণী। এলাকায় বিপুল ভূসম্পত্তি ছিল তাঁদের। বড় ছেলে হিসেবে নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুকে মাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার পরই পারিবারিক জোতদারি ও ব্যবসার দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। তবে তিনি ছিলেন সমাজ ও সংস্কৃতির সেবক ও বিদ্যানুরাগী। দৌলতপুরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলার, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা রাখতেন এবং খরচের জোগান দিতেন। দরিদ্রদের চিকিৎসা, মেয়ের বিয়েএসবে তিনি প্রচুর সহায়তা করতেন। তাঁকে সবাই মান্য করতেন। এলাকায় অনেক স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিতেন। গ্রামের ছেলেদের খেলার জন্য নিজের জায়গায় মাঠ করে দিয়েছিলেন। আবার ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন।

ব্রিটিশ আমল থেকেই নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুদের বাড়িতে লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি থানায় এই বন্দুক জমা দিতে বাধ্য হন। তখন বাড়ির নিরাপত্তার জন্য বর্শা, বল্লম, টেঁটা, রামদা ও লাঠির মতো দেশীয় অস্ত্র মজুত করে রাখা হয়। অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকেই পরিবারটি ছিল স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার। মানিকগঞ্জ এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধা এই বাড়িতে গোপনে আশ্রয় নিতেন।

একাত্তরের ২৬ আগস্ট মধ্যরাতে স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে একটি বড় নৌকায় করে ২৫-৩০ জন পাকিস্তানি সেনা এসে নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুদের বাড়ি ঘিরে ফেলে। বাড়ির সবাই দোতলা ঘরে উঠে আশ্রয় নিলে ঘাতক সেনারা দোতলায় গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বাধ্য হয়ে সবাই নিচে নেমে এলে ঘাতকেরা নরেন্দ্রনাথ কুন্ডু, তাঁর ছেলে নরেশনাথ কুন্ডু, ভাই নৃপেন্দ্রনাথ কুন্ডু ও ভাতিজা মিরেন্দ্রনাথ কুন্ডুকে ধরে নিয়ে যায়। নদীপথে যাওয়ার সময় নরেশ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যান। ঘাতকেরা অন্য তিনজনকে হত্যা করে পদ্মায় লাশ ভাসিয়ে দেয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের বাংলার প্রভাষক এবং জেলা মুক্তিযুদ্ধ পাঠ ও গবেষণা পরিষদের সদস্যসচিব মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর ছবি ও তথ্য পাঠান। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে তাঁর মাঠপর্যায়ে গবেষণার তথ্য নিয়ে প্রকাশিত স্মৃতি ও শ্রুতিতে মানিকগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধ বইতে শহীদ নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর জীবনী ও শহীদ হওয়ার তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া ড. হারুন-অর-রশিদ সম্পাদিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ বইতে নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুসহ তাঁর ভাই ও ভাতিজার শহীদ হওয়ার তথ্য রয়েছে। শহীদদের স্মরণে দৌলতপুর উপজেলায় নির্মিত স্মৃতিফলকে নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর নাম রয়েছে।

শহীদ নরেন্দ্রনাথ কুন্ডুর স্ত্রী বীণা রানী কুন্ডু প্রায় ১৫ বছর আগে মারা যান। তাঁদের ছয় ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলে নিত্যানন্দ কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দশম শ্রেণিতে পড়তেন। স্বাধীনতার জন্য বাবা, কাকা ও কাকাতো ভাই শহীদ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কেউ শহীদের সরকারি স্বীকৃতি পাননি।

প্রথম প্রকাশ : প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০