ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

নূর সাহেব চৌধুরী

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
নূর সাহেব চৌধুরী

সান্তাহার রেলওয়ে কলোনির ঢাকাপট্টি এলাকায় বসবাস করতেন শহীদ নূর সাহেব চৌধুরী। ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে এলাকায় তাঁর সুখ্যাতি ছিল।

খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চার প্রতিও প্রবল ঝোঁক ছিল তাঁর। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বগুড়ার সান্তাহার জংশনের রেলওয়ের কর্মকর্তা-শ্রমিকসহ এলাকার তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে যেতে উদ্বুদ্ধ করতেন। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। এ কারণে রাজাকাররা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সান্তাহার রেলওয়ে জংশন এলাকার ৬০-৬৫ শতাংশ বাসিন্দাই ছিল অবাঙালি। নূর সাহেবকে শুভাকাঙ্ক্ষীরা পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাননি। একাত্তরের ২২ এপ্রিল স্ত্রী খাদিজা বেগম, চার সন্তানসহ নূর সাহেব চৌধুরীর পরিবারের ১১ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বর্বর সেনার দল।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে নূর সাহেব চৌধুরী সম্পর্কে ছবি ও তথ্য পাঠান নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আল মেহমুদ রাসেল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর রক্তঋণ ১৯৭১: নওগাঁ ও গণহত্যা ১৯৭১: নওগাঁ নামে দুটি মাঠপর্যায়ের গবেষণাগ্রন্থ রয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্য সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।

নূর সাহেব চৌধুরীর জন্ম ১৯১৭ সালে। আদিনিবাস কুমিল্লা দক্ষিণ সদর উপজেলার চরথা এলাকায়। তাঁর দাদা রেলওয়েতে চাকরি করতেন, কর্মস্থল ছিল বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার জংশনে। সেই সূত্রেই তাঁরা সান্তাহারে স্থায়ী হন। নূর সাহেবের বাবা ফজলে আহমেদ চৌধুরী সান্তাহারে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ছিলেন। নূর সাহেবের ছয় ছেলে ও পাঁচ মেয়ে।

নূর সাহেব চৌধুরী সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে উনসত্তরের গণ-আন্দোলনে সান্তাহারে সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার হন। স্থানীয় তরুণ ও যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেন।

শহীদ নূর সাহেব চৌধুরীর ছেলে মাসুদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, একাত্তরের ২২ এপ্রিল হানাদার সেনারা ট্রেনে সান্তাহার শহরে এসেই শুরু করে গণহত্যা। তারা শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়। সান্তাহার শহর একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। ওই দিন তিন শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে বর্বর ঘাতক সেনার দল। বিপদ টের পেয়ে তাঁর বাবা বাড়ির সবাইকে পাশের প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

বেলা ১১টার দিকে বিহারি রাজাকার জিয়াউল পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের নিয়ে তাঁদের বাড়িতে আসে। ঘাতক সেনারা বাড়িতে ঢুকেই নূর সাহেবকে গুলি করে হত্যা করে।

মাসুদ আহমেদ বলেন, বাবার চিৎকার শুনে মা, আমার ভাই ফারুক চৌধুরী, জয়নাল আবেদিন চৌধুরী, বোন বুলু চৌধুরী ও সীমা চৌধুরী, নানি রহিমা বেগমসহ আত্মীয়রা আমাদের বাড়িতে ছুটে আসে। আমিও তাদের সঙ্গে ছিলাম।

ঘাতক সেনারা তাদের মধ্যে থেকে মা, চার ভাইবোন, নানিসহ ১০ জনকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। আমার বয়স ছিল তখন প্রায় ১০ বছর।

ছোট বলে আমাকে তারা ছেড়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবার হিসেবে আমাদের সমবেদনা জানিয়ে একটি চিঠি ও দুই হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। সেই চিঠিটি এখনো আগলে রেখেছি।

প্রথম প্রকাশ : প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০