ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

ওসমান গণি

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ০৪:৩৮ পিএম
ওসমান গণি

ওসমান গণি মণ্ডল ছিলেন শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন বন্দুক। এলাকার তরুণদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতেন। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে নওগাঁ শহর থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতেন। স্থানীয় রাজাকাররা তাঁর এই ভূমিকার কথা তাদের প্রভু পাকিস্তানি ঘাতক সেনাদের জানিয়ে দেয়। হানাদার সেনারা ধামইরহাটের গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

শহীদ ওসমান গণির জন্ম ১৯১৬ সালে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ফার্সিপাড়া গ্রামে। বাবা আলেক মোহাম্মদ ও মা আরাফি বেগম। ১৯৩১ সালে ফার্সিপাড়া মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক পাসের পর ভারতের রায়গঞ্জে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন। ১৯৫৬ সালে ধামইরহাট সুফিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে ওসমান গণি মণ্ডলের তথ্য ও ছবি পাঠান নওগাঁর সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আল মেহমুদ। মাঠপর্যায়ের গবেষণার ভিত্তিতে একুশে পরিষদ নওগাঁ প্রকাশিত রক্তঋণ ১৯৭১: নওগাঁ বইয়ে ওসমান গণি মণ্ডলের জীবনী রয়েছে। সেই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করা হয়।

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুক্তিসংগ্রাম অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে ওসমান গণি এলাকাবাসীকে স্বাধীনতার সপক্ষে সংগঠিত করতে শুরু করেন। তাঁদের বাড়িতে দুটি লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল। তরুণদের তিনি সেই বন্দুক দিয়ে অস্ত্র চালানো শেখাতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তরুণদের অনেককে আরও প্রশিক্ষণের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে ভারতে পাঠাতেন।

রাজাকাররা হানাদার বাহিনীকে এসব খবর দিলে ২৭ মার্চ বিকেলে ঘাতক সেনারা ফার্সিপাড়া গ্রামে হামলা করে। তারা ওসমান গণি মণ্ডল ও তাঁর সহযোগী প্রতিবেশী জসিম উদ্দিন খোকাকে বাড়ি থেকে আটক করে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে ফেলে। কোমরে দড়ি বেঁধে রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারতে মারতে ধামইরহাট ক্যাম্পে নিয়ে যায়। দূর থেকে পথের দুপাশে দাঁড়িয়ে গ্রামের অনেক নিরুপায় মানুষ তাঁদের এই নির্যাতনের দৃশ্য দেখেন। হানাদাররা এই দুজনকে অমানুষিক নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে।

শহীদ ওসমান গণির ছেলে মোতলেবুর রহমান ধামইরহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, একাত্তরের আমার বয়স ছিল আট-নয় বছর। সেদিন বিকেলে বাবা কেবল আসরের নামাজ শেষ করেছেন। এমন সময় হানাদার সেনারা বাড়িতে হানা দেয়। বাবার মৃত্যুর পর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। মা রহিমা খাতুন অনেক কষ্ট করে সংসার চালানোর পাশাপাশি আমাদের চার ভাই ও দুই বোনকে বড় করেছেন। তবে স্বাধীনতার জন্য বাবার যে ভূমিকা, এটা ভাবলে এখনো গর্ব হয়। দুঃখ এটাই, বাবা এখনো সরকারিভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীর মর্যাদা পাননি।

ধামইরহাট পৌরসভা ২০০৭ সালে শহীদ ওসমান গণি মণ্ডল সড়কনামে পৌরসভার একটি সড়কের নামকরণ করেছে। এ ছাড়া ওসমান গণি ও জসিম উদ্দিনের কবরে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।

প্রথম প্রকাশ : প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০