ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

এনসিপির তানভীরকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না

গাজী সালাউদ্দিন তানভীর | ফাইল ছবি
গাজী সালাউদ্দিন তানভীর | ফাইল ছবি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া নেতা গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। জেলা প্রশাসক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার, সরকারি কেনাকাটায় কমিশন বাণিজ্য, এবং সচিবালয়ে বেআইনি প্রভাব খাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ তাকে ঘিরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এমন স্পর্শকাতর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরও তাকে গ্রেফতার না করা এবং সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়া জনমনে প্রশ্ন ও অসন্তোষ তৈরি করছে।

তানভীরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো কেবল তার ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড নয়; বরং এটি প্রশাসনের অভ্যন্তরে দুর্নীতির গভীরতার প্রমাণ। সচিবালয়ের মতো জায়গায় তার অবাধ প্রবেশ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক, এবং আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ইঙ্গিত দেয় যে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির একটি সুসংগঠিত চক্র এ দেশে কার্যকর।

নাগরিক সমাজের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—তানভীরের মতো একজন ব্যক্তি কীভাবে প্রশাসনের ভেতরে এত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হলো? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের ভেতরেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা তার মতো ব্যক্তিদের জন্য সহযোগী হয়ে কাজ করছে।

তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ আমাদের প্রশাসনিক কাঠামোর একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। গাজী সালাউদ্দিন তানভীরের মতো ব্যক্তিরা কেবল সমস্যার সাম্প্রতিক উদাহরণ। জেলা প্রশাসক নিয়োগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় তার ভূমিকা এবং কোটি কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণ করে, কেবল একজন ব্যক্তিকে দায়ী করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। বরং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতির মূল উৎপাটন জরুরি।

এনসিপি নিজেদের নতুন ধাঁচের রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে উপস্থাপন করলেও, তাদের ভেতরে এমন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির স্থান পাওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও তানভীরকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, এটি যথেষ্ট নয়। এনসিপিকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে তদন্তে সহযোগিতা করা উচিত।

তানভীরের বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। এটি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়; বরং এটি আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থায় আঘাত হানে। একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা অপরিহার্য।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তানভীরের অপকর্ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নেটিজেনদের অনেকেই সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন—তানভীরের পেছনে এমন কী শক্তি কাজ করছে, যার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? কেউ কেউ বলছেন, তাকে গ্রেফতার করলে আরও বড় দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পেতে পারে, যা হয়তো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম সামনে নিয়ে আসবে।

তানভীরের ঘটনায় কেবল তাকে দায়ী করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে আমাদের কতটা পথ বাকি।

আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হলে কেবল তানভীর নয়, তার সঙ্গে যুক্ত পুরো দুর্নীতির নেটওয়ার্ককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটাই জনগণের দাবি, এবং এটাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৯ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন

বাগেরহাটের কান্দাপাড়া পৈশাচিক গণহত্যা

পাগলা দেওয়ান মসজিদ গণহত্যা

১৮ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিন ও কান্দাপাড়ার পৈশাচিক গণহত্যা

১৭ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি

১৬ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও যুদ্ধের মোড় পরিবর্তন

বাজেট ২০২৫-২৬ / বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে

নগদের মাধ্যমে সরকারি ভাতার ১৭১১ কোটি টাকা গায়েব!

বাজেট ২০২৫-২৬ / ফরমায়েশের ঝাঁপি, বোঝা বাড়ার ভয়

বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান বৃদ্ধির নির্দেশনা নেই / শিল্প-ব্যবসায় করের বোঝা বাড়ল

১০

মূল্যস্ফীতি ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব

১১

মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা, বাড়বে সংসার খরচ

১২

সংস্কার নাকি অপচয়? / নতুন নোটের পেছনে ২০ হাজার কোটি টাকার গল্প

১৩

৩ জুন, ১৯৭১: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ঘটনাবলি

১৪

শহীদ বুদ্ধিজীবী / এ কে এম সিদ্দিক বিশ্বাস

১৫

শহীদ বুদ্ধিজীবী / কোরবান আলী

১৬

শহীদ বুদ্ধিজীবী / শান্তিময় খাস্তগীর

১৭

শহীদ বুদ্ধিজীবী / এ কে এম মনিরুজ্জামান

১৮

১০ বছরে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ, স্থবির অর্থনীতি

১৯

২ জুন ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন

২০