ঢাকা শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

মঙ্গল শোভাযাত্রার অবসান: অমঙ্গলের সংস্কৃতি!

আনিস আহম্মেদ
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
মঙ্গল শোভাযাত্রার অবসান: অমঙ্গলের সংস্কৃতি!

খবরে দেখলাম, এবারের নববর্ষে—এই পহেলা বৈশাখে—মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে পূর্বেকার নাম বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা আনন্দ শোভাযাত্রা—কোনো নাম নিয়েই বিতর্কের অবকাশ থাকে না, যদি না সেই নাম পরিবর্তনের পেছনে একধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা কাজ করে। তবে অনেকেই জানেন না যে ধর্ম ও সংস্কৃতি এক জিনিস নয়।

সংস্কৃতি দেশ ও স্থানভিত্তিক, ধর্ম কোনো স্থানের অধীনে নয়। কাজেই একই ধর্মের অনুসারী ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি অনুসরণ করতে পারেন; আবার একই সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের লোকের অবস্থান থাকতে পারে। সংস্কৃতি হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক সত্য ও সত্তা।

যারা 'মঙ্গল' শব্দটির মধ্যে ভিন্ন ধর্মের আভাস পান, তাঁরা কি জানেন যে আমাদের সপ্তাহের প্রতিটি দিনের নামের উৎপত্তি কোনো না কোনো দেব-দেবতার নাম অনুসারে? তাই বলে কি আমরা সপ্তাহের নামগুলো পরিহার করব? আর কেবল বাংলাই বা কেন—ইংরেজিতেও সপ্তাহের দিনগুলোর নাম প্রাচীন আমলের দেব-দেবীর নামানুসারে। কই, ইংরেজি সপ্তাহের দিনগুলোর নামের তো কোনো পরিবর্তন করা হয়নি! তবে 'মঙ্গল' নিয়ে এই অ্যালার্জি কেন?

আর 'মঙ্গল' শব্দটির যে ইতিবাচক অর্থ রয়েছে—যা অমঙ্গলের বিপরীত—সেটিও কি আমরা ভুলে যাবো? সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মের প্রভাব খাটানো কোনো ক্রমেই সমীচীন নয়। এমনকি যে আরব দেশে ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি, তারাও নিজেদের পরিচয় দেওয়ার সময় বলেন না যে তারা মুসলিম, তারা বলে তারা আরব। সেখানেও বিয়ের মতো শুভ অনুষ্ঠানে উলুধ্বনি দেওয়া হয়—ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তা করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতির মুক্তির আহ্বান থেকে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন কিংবা ’৬১-তে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আন্দোলনই বাঙালিকে তার জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? 'মঙ্গল' যদি পরিত্যাজ্য হয়, তবে 'আনন্দ'ও কি সংস্কৃতিজাত শব্দ নয়?

আর সাংস্কৃতিক এই বিশাল উদযাপনকে যারা রাজনীতির রঙে রাঙাতে চান, তারাও ভুল করছেন। প্রতীকী মুখোশ কিংবা মূর্তি থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন কল্যাণের বার্তা বহন করে। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলের ব্যঙ্গাত্মক কিছু থাকলে, তা সার্বজনীন আনন্দকেই বিভাজিত করতে পারে।

বর্ষবরণের এই শোভাযাত্রার নাম যাই হোক না কেন, তা যেন সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য মঙ্গলের বার্তা বয়ে আনুক—সেটিই কাম্য। আমরা যেন সকলে মিলে গাইতে পারি:

“এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার।”

সেই সাফল্যের সূর্যোদয়ের প্রত্যাশী বাংলাদেশের সকল বাঙালি।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০