ad

মঙ্গল শোভাযাত্রার অবসান: অমঙ্গলের সংস্কৃতি!

আনিস আহম্মেদ
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম
মঙ্গল শোভাযাত্রার অবসান: অমঙ্গলের সংস্কৃতি!

খবরে দেখলাম, এবারের নববর্ষে—এই পহেলা বৈশাখে—মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে পূর্বেকার নাম বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা করা হচ্ছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা আনন্দ শোভাযাত্রা—কোনো নাম নিয়েই বিতর্কের অবকাশ থাকে না, যদি না সেই নাম পরিবর্তনের পেছনে একধরনের সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা কাজ করে। তবে অনেকেই জানেন না যে ধর্ম ও সংস্কৃতি এক জিনিস নয়।

সংস্কৃতি দেশ ও স্থানভিত্তিক, ধর্ম কোনো স্থানের অধীনে নয়। কাজেই একই ধর্মের অনুসারী ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি অনুসরণ করতে পারেন; আবার একই সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের লোকের অবস্থান থাকতে পারে। সংস্কৃতি হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক সত্য ও সত্তা।

যারা 'মঙ্গল' শব্দটির মধ্যে ভিন্ন ধর্মের আভাস পান, তাঁরা কি জানেন যে আমাদের সপ্তাহের প্রতিটি দিনের নামের উৎপত্তি কোনো না কোনো দেব-দেবতার নাম অনুসারে? তাই বলে কি আমরা সপ্তাহের নামগুলো পরিহার করব? আর কেবল বাংলাই বা কেন—ইংরেজিতেও সপ্তাহের দিনগুলোর নাম প্রাচীন আমলের দেব-দেবীর নামানুসারে। কই, ইংরেজি সপ্তাহের দিনগুলোর নামের তো কোনো পরিবর্তন করা হয়নি! তবে 'মঙ্গল' নিয়ে এই অ্যালার্জি কেন?

আর 'মঙ্গল' শব্দটির যে ইতিবাচক অর্থ রয়েছে—যা অমঙ্গলের বিপরীত—সেটিও কি আমরা ভুলে যাবো? সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মের প্রভাব খাটানো কোনো ক্রমেই সমীচীন নয়। এমনকি যে আরব দেশে ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি, তারাও নিজেদের পরিচয় দেওয়ার সময় বলেন না যে তারা মুসলিম, তারা বলে তারা আরব। সেখানেও বিয়ের মতো শুভ অনুষ্ঠানে উলুধ্বনি দেওয়া হয়—ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই তা করে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছে ভাষা ও সংস্কৃতির মুক্তির আহ্বান থেকে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন কিংবা ’৬১-তে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আন্দোলনই বাঙালিকে তার জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? 'মঙ্গল' যদি পরিত্যাজ্য হয়, তবে 'আনন্দ'ও কি সংস্কৃতিজাত শব্দ নয়?

আর সাংস্কৃতিক এই বিশাল উদযাপনকে যারা রাজনীতির রঙে রাঙাতে চান, তারাও ভুল করছেন। প্রতীকী মুখোশ কিংবা মূর্তি থাকতেই পারে, কিন্তু তা যেন কল্যাণের বার্তা বহন করে। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলের ব্যঙ্গাত্মক কিছু থাকলে, তা সার্বজনীন আনন্দকেই বিভাজিত করতে পারে।

বর্ষবরণের এই শোভাযাত্রার নাম যাই হোক না কেন, তা যেন সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য মঙ্গলের বার্তা বয়ে আনুক—সেটিই কাম্য। আমরা যেন সকলে মিলে গাইতে পারি:

“এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হলো কার।”

সেই সাফল্যের সূর্যোদয়ের প্রত্যাশী বাংলাদেশের সকল বাঙালি।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মিরা’র ঈদ সংগ্রহ / ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে এক অনন্য উদযাপন

২৭ এপ্রিল ১৯৭১: বিশ্বজুড়ে গণহত্যার নিন্দা

ধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা

বাম রাজনীতির দ্বিধা: আদর্শের সংকট ও ডানপন্থার সাথে সহাবস্থান

ন্যানো-বালাইনাশক: ফসল ও পরিবেশ সুরক্ষায় নব-বিপ্লব

পটুয়াখালী গণহত্যা দিবস আজ

কাশ্মিরে দুপক্ষের মধ্যে আবারও গোলাগুলি

সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো

পেহেলগামে হামলা : আসামে একদিনে গ্রেপ্তার ৯

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা: ইতিহাস ও ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ

১০

ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই চলমান সংকট সমাধান করবে: ট্রাম্প

১১

ওমানে আজ তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

১২

ভারতের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে পাকিস্তানের সব দল

১৩

রাবির ‘এ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন বোরহান ও সাদিয়া

১৪

ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি এখন জাপানের চেয়েও বড়

১৫

প্রতিবাদের মুখে চলচ্চিত্রে অনুদানের নতুন নিয়ম স্থগিত

১৬

পুরুষের জন্য এল নতুন জন্মনিরোধক, একবার ব্যবহারে নিশ্চিন্ত দুই বছর

১৭

পাকিস্তানি অভিনেতার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না ভারতে

১৮

১৯৮৫ সালের মামলায় ইয়ামি গৌতম

১৯

জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

২০