ড. এ আর মল্লিকের ঐতিহাসিক ঘোষণা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা ড. এ আর মল্লিক দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, "পাকিস্তানের সঙ্গে একমাত্র সমাধান হলো স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।" তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানি সেনারা শহরগুলো দখল করলেও গ্রামাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, সরকারি কার্যক্রম অচল।
ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য: ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে এক জনসভায় বলেন, "বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা একটি জাতীয় বিপ্লব। শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রাম ন্যায্য।"
আইএমএফের সুপারিশ: নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পশ্চিমা দেশগুলোকে পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তৎপরতা: সরদার শরণ সিং লন্ডনে পৌঁছে ব্রিটিশ নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী সংকট ও রাজনৈতিক সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থন: মস্কোভিত্তিক পত্রিকা নিউ টাইমস-এ প্রকাশিত নিবন্ধে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের নির্বাচনী রায় অস্বীকারকে নিন্দা করা হয়।
জার্মানিতে কমিউনিস্ট নেতার বক্তব্য: ভারতের কমিউনিস্ট নেতা ভূপেন গুপ্ত পূর্ব বার্লিনে সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টির সম্মেলনে বাংলাদেশের গণহত্যার বিবরণ দিয়ে বিশ্বসমাজের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গোলাম আযমের বিবৃতি: জামায়াতে ইসলামীর নেতা গোলাম আযম রাওয়ালপিন্ডিতে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেন, "পূর্ব পাকিস্তানে সেনা অভিযান ছাড়া বিকল্প ছিল না।"
টিক্কা খানের প্রতিনিধিদল: ঢাকার সামরিক গভর্নর টিক্কা খান ঘোষণা দেন, হামিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি দল বিদেশে পাকিস্তানের পক্ষে প্রচারণা চালাবে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের লাঠিটিলা সীমান্ত ঘাঁটি আক্রমণ করে দখল নেয়। তুমুল যুদ্ধে:
৪ মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
পাকিস্তানি হাবিলদার ও এক সিপাহি আটক হন।
প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দভাগে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অ্যামবুশ করে ৯ সেনাকে হত্যা করে।
চৌদ্দগ্রাম: পাকিস্তানি সেনারা ফেনী-লাকসাম থেকে দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। দিনব্যাপী যুদ্ধে ২০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। ২ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৪ জন আহত হন।
চাঁদগাজী: পাকিস্তানি বাহিনী মুহুরী নদী দিয়ে আর্টিলারি ও মর্টার সহযোগে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। ১৫০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হলেও মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তান শরণার্থীদের জমির দলিল নষ্ট করে অন্যাদের মধ্যে বণ্টন করছে, যা তাদের ফেরার পথ রুদ্ধ করছে।
ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৯ জন।
বাংলাদেশ সংহতি দিবস: ভারতজুড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো এই দিবস পালন করে। কলকাতার সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়।
১৯ জুন ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সামরিক অগ্রগতি স্পষ্ট হয়। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা বাড়ে, অন্যদিকে মুক্তিবাহিনীর সফল অভিযান স্বাধীনতার পথকে সুদৃঢ় করে। এই দিনটি প্রমাণ করে, বাঙালির সংগ্রাম শুধু স্থানীয় নয়—এটি বিশ্বব্যাপী ন্যায়ের লড়াই।
সূত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (অষ্টম-চতুর্দশ খণ্ড)
দৈনিক ইত্তেফাক, আজাদ, পাকিস্তান, অমৃতবাজার পত্রিকা (২০-২১ জুন ১৯৭১)
নিউইয়র্ক টাইমস
মন্তব্য করুন