ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, "পূর্ব বাংলার সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান হলো নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা।" তিনি আরও বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায় যদি আগে থেকেই পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করত, তবে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব হতো।
জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খানের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থীদের ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরেন এবং পাকিস্তানের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্র: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, "বাংলাদেশের মানুষ সার্বভৌমত্ব চায়, ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না।"
জাতিসংঘ: মহাসচিব উ থান্টের মধ্যস্থতায় ঢাকা থেকে ভারতীয় ও কলকাতা থেকে পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব পাকিস্তান মেনে নেয়।
ইউরোপীয় দেশসমূহ: সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরি একত্রে পাকিস্তানের ওপর চাপ বৃদ্ধির আহ্বান জানায়।
নিউইয়র্ক টাইমস: সম্পাদকীয়তে পাকিস্তানকে মার্কিন সাহায্য বন্ধের দাবি করা হয় যতক্ষণ না তারা গণহত্যা বন্ধ করে রাজনৈতিক সমাধানে আসে।
পাকিস্তান সফররত ব্রিটিশ এমপি জেমস টিন ও জিল নাইট ঢাকায় বলেন, "ব্রিটিশ মিডিয়া পাকিস্তানের পক্ষের খবর কম দেখায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন ছিল।" তাদের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়।
ঝালকাঠির জগদীশপুর, খাজুরা, রামপুর ও মিরাখালি গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জগদীশপুর স্কুল মাঠে জড়ো করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। এতে প্রায় ৬০ নিরীহ মানুষ নিহত হন।
টাঙ্গাইল: বাশাইল থানার কামুটিয়া নর্থখোলায় কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সংঘর্ষে ৫ সেনা নিহত হয়।
চট্টগ্রাম: মুক্তিবাহিনীর চাঁদগাজী ঘাঁটিতে পাকিস্তানিরা ট্যাংক-মর্টার দিয়ে আক্রমণ চালালেও ক্যাপ্টেন অলি, শামসুল হুদা ও মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করে ৪৫ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে।
ফেনী: বিলোনিয়ায় পাকিস্তানি বিমান হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা সরে গিয়ে চিতলিয়ায় নতুন ঘাঁটি গড়ে তোলেন।
দিনাজপুর: ঠনঠনিয়াপাড়ায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানিরা ব্যূহ ভেঙে পালাতে বাধ্য হয়।
দ্য স্টেটসম্যান (লন্ডন): ১২০ ব্রিটিশ লেবার এমপি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানান।
গায়ানা ইভনিং পোস্ট: সম্পাদকীয়তে ভারতের শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়।
১৭ জুন ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কূটনৈতিক ও সামরিক অগ্রগতির একটি মাইলফলক। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়, শরণার্থী ইস্যুতে ভারতের ভূমিকা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্য এই দিনকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। পাকিস্তানের গণহত্যা ও দমননীতির বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনে এদিনের ঘটনাবলি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
তথ্যসূত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (অষ্টম, নবম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড)
দৈনিক ইত্তেফাক, পাকিস্তান, অমৃতবাজার পত্রিকা (১৮ জুন ১৯৭১)
নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য স্টেটসম্যান, গায়ানা ইভনিং পোস্টের প্রতিবেদন
মন্তব্য করুন