১৯৭১ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও মানবিক সমর্থন জোরালো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্যসভায় ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন,
“বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য, কিন্তু আমরা মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামকে দমনের পক্ষে নই। শরণার্থীদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো মানে তাদের বর্বরতার মুখে ঠেলে দেওয়া।”
এদিন আরব বিশ্বের পাঁচটি যুব সংগঠন (সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, সুদান, লেবানন) যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানের "ইসলামিক দেশ বিপন্ন" এর অপপ্রচারকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা বাংলাদেশে গণহত্যার বিরুদ্ধে আরব জনগণকে সচেতন করার আহ্বান জানায় এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি তোলে।
যুক্তরাষ্ট্র: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্স-এর সাথে বৈঠকে সতর্ক করেন, "পাকিস্তানের দমননীতি অব্যাহত থাকলে ভারত কঠোর পদক্ষেপ নেবে।"
জাতিসংঘ: মহাসচিব উ থান্ট শরণার্থী সংকটকে "বিশ্বের সবচেয়ে জটিল মানবিক বিপর্যয়" আখ্যায়িত করে আফ্রিকান সম্মেলন বাতিল করেন।
কানাডা: অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী মিশেল শার্প সংসদে বলেন, "শেখ মুজিবের দলকে ক্ষমতা হস্তান্তরই একমাত্র সমাধান।"
ব্রিটেন: কমন্স সভার ১২০ সদস্য জাতিসংঘে পাকিস্তানের নিন্দা resolution পেশ করেন।
ডেইলি মিরর: সাংবাদিক জন পিলজার-এর "একটি জাতির মৃত্যু" শীর্ষক রিপোর্টে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা বিশ্বদরবারে উন্মোচিত হয়।
প্রাভদা: সোভিয়েত ইউনিয়নের মুখপত্র শরণার্থীদের দুর্দশা তুলে ধরে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া: তামিলনাড়ুতে বাংলাদেশের পক্ষে গণআন্দোলনের খবর প্রকাশ করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুরেন্দ্রনাথ সিং ঘোষণা দেন, "৬ মন্ত্রী বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে যাবেন।"
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম স্পষ্ট করেন, "সীমান্তে কোনো আক্রমণই unanswered থাকবে না।"
চট্টগ্রাম: ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান-এর নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে ৫০ পাকসেনা নিহত।
গোপালগঞ্জ: কোদালধোয়া ঘাঁটিতে ৯ পাকসেনা খতম।
কুমিল্লা: রাজাপুর রেলস্টেশনে অ্যামবুশে ৮ সেনা নিহত, অস্ত্রলুট।
যশোর: বেনাপোলে হানাদার ঘাঁটি বিধ্বস্ত।
ঝালকাঠি: পাকবাহিনী ও স্থানীয় দোসরদের হাতে শতাধিক বাঙালি নিহত।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী দাবি করেন, "পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক!" অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াহিয়া খান-কে সমর্থন জানিয়ে করাচি আসেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (৯ম-১৪শ খণ্ড)
দৈনিক কালান্তর, অমৃতবাজার পত্রিকা, ইত্তেফাক (১৬-১৮ জুন ১৯৭১)
আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর (ভারত, ১৭ জুন ১৯৭১)
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর ১, ২, ৮)
মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালি: যুক্তরাজ্য – আবদুল মতিন
মন্তব্য করুন