২৫ মার্চের গণহত্যা ও ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ান, চিরলা, ভুটিয়াপাড়া, নওপাড়া, পাহনন্দা ও খাসপাহনন্দা এলাকার যুবকেরা ব্যাপক সংখ্যায় ভারতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনারা এ তথ্য জানতে পেরে এলাকাবাসীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
সেদিন শুক্রবার হওয়ায় পাগলা দেওয়ান ও আশেপাশের মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করছিলেন। নামাজের খুতবা চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহায়তায় মসজিদগুলো ঘিরে ফেলে এবং নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায়:
মুসল্লিদের গালিগালাজ করে মসজিদ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে আনা হয়।
প্রায় ৩০০ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের মধ্যে থেকে ৪০ জনকে বেছে নেওয়া হয় নির্মম হত্যার জন্য। বাকিদের জোরপূর্বক বাংকার খনন ও সেনা কাজে ব্যবহারের হুমকি দেওয়া হয়।
শিক্ষক বাহার উদ্দিন (ধলাহার প্রাথমিক বিদ্যালয়) প্রতিবাদ করায় তাকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়।
বাকি ৩৯ জনকে বুক সমান গভীর গর্ত খনন করতে বাধ্য করা হয়।
একে একে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়।
আহত অবস্থায় আবেদ আলী, সোলায়মান আলী দেওয়ান, মোজাম্মেল, মোজাফফর, খোকা প্রমুখ বেঁচে যান এবং পরবর্তীতে গণহত্যার সাক্ষ্য দেন।
নাম | গ্রাম |
---|---|
আনেস আলী মণ্ডল | চকবরকত |
মফিজউদ্দিন ও গইমুদ্দিন (দুই ভাই) | চিরলা |
নাজির উদ্দিন | পাহনন্দা |
বাহার উদ্দিন মাস্টার | ধলাহার |
কসিম উদ্দিন | পাহনন্দা |
গানা সরদার | পাহনন্দা |
আহমেদ ও মোহাম্মদ আলী | চিরলা |
সিরাজুল | নিধি |
মমতাজ, বাহার উদ্দিন সরদার, নিঝুম সরদার | চকবরকত |
অনেকের নামই অজানা থেকে গেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর এলাকাবাসী আরও দৃঢ়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। জয়পুরহাটের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে গেরিলা আক্রমণ তীব্রতর হয়।
পাগলা দেওয়ান মসজিদ গণহত্যা শুধু একটি স্থানের трагеই নয়— এটি ১৯৭১ সালের গণহত্যার একটি প্রতীকী ঘটনা, যেখানে ধর্মীয় স্থানেও পাকিস্তানি বাহিনী নির্মমতা চালিয়েছে। আজও এই দিনটি জয়পুরহাটবাসীর মনে গভীর ক্ষত রেখে গেছে।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (৫ম খণ্ড), স্থানীয় সাক্ষাৎকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণা।
মন্তব্য করুন