ad

সাম্প্রদায়িকতা চাই না - নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তি চাই

ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা | ছবি: রয়টার্স
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা | ছবি: রয়টার্স

(১) গাজায় যে গণহত্যা চলছে, সেটা সহ্য করার মতো নয়। এর প্রতিবাদ করি। সবাইকে আহ্বান করি প্রতিবাদ করুন। কোনো গণহত্যারই সাফাই হয় না, গাজায় যে গণহত্যা হচ্ছে, সেটারও কোনো সাফাই হয় না, কোনো 'যদি,' 'কিন্তু,' 'তবে' হয় না। মুক্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করুন। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রতিরোধ করা যেতো। আফসোস, সেই সুযোগ আমাদের নেই। অন্তত প্রতিবাদটা করুন। আপনার আমার একজনের কণ্ঠ হয়তো ক্ষীণ মনে হয়, কিন্তু এই ক্ষীণ কণ্ঠগুলোই মিলিত আকারে বিশ্বব্যাপী গণবিক্ষোভে রূপ নেবে। প্রতিবাদ করুন।

শুধু একটা অনুরোধ করি, গণহত্যার প্রতিবাদে মেহেরবানি করে সাম্প্রদায়িকতা করবেন না। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজায় যে গণহত্যা পরিচালনা করছে, সেটার সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এই গণহত্যাটিকে ইহুদি বনাম মুসলমান যুদ্ধ বানাবেন না। এটা হচ্ছে নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর নেতানিয়াহু সরকারের নির্লজ্জ, নির্মম, অমানবিক আক্রমণ। আক্রমণটা হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর—ওরা ফিলিস্তিনি বলেই এই হামলা, মুসলমান বলে নয়।

আজ ইয়াসির আরাফাতকে মনে পড়ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামে ফিলিস্তিনিদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি। তিনি নিজে সাম্প্রদায়িক ছিলেন না এবং তাঁর দল ফাত্তাহ সেটাও কোনো সাম্প্রদায়িক দল ছিল না। ইয়াসির আরাফাত নিজে সমাজতন্ত্রী ছিলেন, তাঁর দলটিও সমাজতন্ত্রী ছিল। আর তাঁদের জোট, পিএলও, সেটিকেও আমরা সকলে বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের চলমান সংগ্রামের অংশ হিসেবেই জানতাম। সেইভাবেই আমরা সকলে সব দেশে পিএলওর পাশে থাকতাম।

(২) ইয়াসির আরাফাত এবং পিএলওর মিত্র ছিল কারা, সেটাও দেখুন। পিএলওর মিত্র ছিল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীরা। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন এখন আর কার্যকর নেই। এজন্য এর কথা সকলে মনে রাখেনি। এই আন্দোলনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন পাঁচজন বিশ্বনেতা—ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নো, ভারতের জওহরলাল নেহেরু, যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো, মিশরের গামাল আবদুল নাসের, এবং ঘানার নক্রুমো।

সত্তরের দশকে আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দাঁড়ান ফিলিস্তিনিদের পাশে। আমরা এখনো বলি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির জন্য লড়াই করা। ভুলে যাবেন না যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় ইসরাইল চেয়েছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের সামরিক সাহায্য দিতে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহযোগীরা সেদিন ইসরাইলের সেই সমর্থন গ্রহণ করেননি, কেননা আমাদের প্রবাসী সরকারেরও নীতি ছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো।

সাম্প্রদায়িকতা বর্জন করুন। মনে রাখবেন, সাম্প্রদায়িকতা কেবল মানুষকে বিভক্ত করে, মানুষে মানুষের বিভেদ তৈরি করে। সাম্প্রদায়িকতা মানুষের মধ্যে কখনো কোনোদিন ঐক্য গড়তে পারেনি। এটা সম্ভবও নয়। দুনিয়াব্যাপী খোঁজখবর নিয়ে দেখুন, গাজার এই কঠিন সময়ে বিশ্বব্যাপী যারা গণহত্যার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারা সকলেই সেক্যুলার, কমিউনিস্ট, মানববাদী অথবা সমাজতন্ত্রী। আপনি জানেন কিনা জানি না, ফিলিস্তিনের কমিউনিস্ট পার্টি ও ইসরাইলের কমিউনিস্ট পার্টির বক্তব্য দেখুন—বুঝতে পারবেন।

(৩) গত বছরের অক্টোবরেও ফিলিস্তিনের কমিউনিস্ট পার্টি ও ইসরাইলের কমিউনিস্ট পার্টি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যেখানে এই দুই পার্টি গাজায় সামরিক হামলার নিন্দা করেছে, বিরোধিতা করেছে এবং স্পষ্ট করে বলেছে যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের আর কোনো বিকল্প নেই। ফিলিস্তিনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তি-সামর্থ্য আমি জানি না, কিন্তু ইসরাইলের পার্টির কথা জানি। এরা আমাদের সিপিবির মতো ছোটখাটো কোনো পার্টি নয়, ইসরাইলের পার্লামেন্টে তাদের সিট আছে, হাইফায় তাদের একছত্র আধিপত্য ছিল একসময়।

বঙ্গবন্ধুর কথা যখন এসেছে, একটা কথা আমি না বলে পারছি না। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে আন্তরিক ফিলিস্তিনের আর কোনো মিত্র কখনো ছিল না, এখনো নেই। শাহতা জারাবের কাছে শুনেছি, ১৯৯৬ সনে ইয়াসির আরাফাত যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন, তখন তিনি শাহতা জারাবকে বলেছিলেন, “শেখ হাসিনা আমার কন্যাসম, আমার ভাই শেখ মুজিবের মেয়ে। তুমি ওর খোঁজখবর রাখবে আর আমাকে নিয়মিত জানাবে।” আরাফাত যখন এই কথা বলছিলেন, শাহতা জারাবের বর্ণনায়, এই সিংহহৃদয় সংগ্রামী নেতার চোখে ছিল জল।

(৪) আজ ফিলিস্তিনিদের পাশে সেই বিশাল হৃদয়ের নেতাদের মতো কেউ নেই। বিশ্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার তাবেদার। দুনিয়ার কোনা কানাচ পর্যন্ত বেড়েছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের উৎপাত। সেই সোভিয়েত ইউনিয়নও নেই। এখন ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের জন্য যেমন অধিক জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই সাথে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিপক্ষে ঐক্য গড়াও জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে এবং সারা দুনিয়া সর্বত্রই এটি জরুরি।

স্মরণ করিয়ে দিই, ফিলিস্তিনের হয়ে একসময় যুদ্ধ করতে যেতেন বাংলাদেশের যুবকরা। ফিলিস্তিনিদের হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন এই রকম যুবকের জানাজায় যোগ দিতে এসেছিলেন রাজাকারদের কুলশিরোমণি গোলাম আজম। বায়তুল মুকাররমের সেই জানাজা থেকে তাঁকে জুতাপেটা করে বের করে দিয়েছিলেন এই দেশের মানুষ। কেন? কারণ ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। যারা নিজেদের দেশের মানুষের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে শরমের উছিলায় মানুষের বিপক্ষে যায়, সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামে বন্ধু হতে পারে না।

ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামে আপনার সমর্থন জরুরি—কিন্তু সেটা সাম্প্রদায়িক কারণে হওয়া প্রয়োজন নেই। আপনি যদি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের জাতিগত নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করবেন, হোক সেটা ফিলিস্তিনের মানুষ বা আমাদের পাহাড়ের মানুষ। নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। সেখানে যদি ধর্ম টেনে আনেন, তাহলে কোনো না কোনোভাবে আপনি নিপীড়কের পাশেই গিয়ে দাঁড়াবেন। মনে রাখবেন, খোদ ইসরাইলেই ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষেরাই ফিলিস্তিনিদের হয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করছে। ইসরাইলের বাইরেও যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়েছে আজ, তাঁদের সংখ্যাগুরুই হচ্ছে অমুসলিম।

সাম্প্রদায়িকতা চাই না - নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তি চাই। গাজায় গণহত্যা বন্ধ চাই, এক্ষুনি। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই। জয় বাংলা।

ইমতিয়াজ মাহমুদ-এর ফেসবুক থেকে

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ন্যানো-বালাইনাশক: ফসল ও পরিবেশ সুরক্ষায় নব-বিপ্লব

পটুয়াখালী গণহত্যা দিবস আজ

কাশ্মিরে দুপক্ষের মধ্যে আবারও গোলাগুলি

সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো

পেহেলগামে হামলা : আসামে একদিনে গ্রেপ্তার ৯

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা: ইতিহাস ও ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ

ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই চলমান সংকট সমাধান করবে: ট্রাম্প

ওমানে আজ তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে পাকিস্তানের সব দল

রাবির ‘এ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন বোরহান ও সাদিয়া

১০

ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি এখন জাপানের চেয়েও বড়

১১

প্রতিবাদের মুখে চলচ্চিত্রে অনুদানের নতুন নিয়ম স্থগিত

১২

পুরুষের জন্য এল নতুন জন্মনিরোধক, একবার ব্যবহারে নিশ্চিন্ত দুই বছর

১৩

পাকিস্তানি অভিনেতার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না ভারতে

১৪

১৯৮৫ সালের মামলায় ইয়ামি গৌতম

১৫

জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১৬

কাশ্মির হামলায় সরব হলেন সোনাক্ষী সিনহা

১৭

বাংলা ব্যাকরণের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

১৮

কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের সম্পর্ক

১৯

২৬ এপ্রিল ১৯৭১: পাকিস্তানে অর্থনৈতিক অবরোধের আহ্বান

২০