ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২৭ আগস্ট ১৯৭১: কচুয়া বধ্যভূমি (বাগেরহাট)

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম
২৭ আগস্ট ১৯৭১: কচুয়া বধ্যভূমি (বাগেরহাট)

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানা সদরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের দ্বারা একটি বধ্যভূমি সৃষ্টি করা হয়। এই বধ্যভূমিতে অসংখ্য নিরীহ মানুষের ওপর নৃশংস অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।

ঘটনার বিবরণ

১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট, শুক্রবার, কচুয়া থানা সদরে রাজাকারদের একটি থানাভিত্তিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এই ক্যাম্পটি তৎকালীন সিও (সার্কেল অফিসার) অফিসের একটি ভবন দখল করে গঠন করা হয়েছিল। ক্যাম্পটির প্রথম মাসে রাজাকারদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪১ জন, যা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বেড়ে ১৪১ জনে পৌঁছায়। এই রাজাকার বাহিনী তিন থেকে চার মাস ধরে কচুয়া থানা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার চালায় এবং তাদের ক্যাম্পের সামনে একটি বধ্যভূমি সৃষ্টি করে।

এই বধ্যভূমিতে রাজাকাররা বিভিন্ন সময়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা, যাদের নাম ও পরিচয় নিম্নরূপ:

  • টেংড়াখালী গ্রাম: হাশেম আলী শেখ, মো. হাবিব শেখ, সতীশ চন্দ্র মণ্ডল

  • জুসখোলা গ্রাম: ধলু সরদার

  • চরকাঠি গ্রাম: আজাহার আলী সরদার

  • বারইখালী গ্রাম: মনীন্দ্রনাথ সাহা

  • গুয়াতলা গ্রাম: বাবু খান

  • খলিশাখালী গ্রাম: অনিল চন্দ্র হালদার

  • হাজরাকালী গ্রাম: নুরুল হক শেখ

  • কাকারবিল গ্রাম: শফিউদ্দিন মৃধা এবং তাঁর ছেলে শাহজাহান মৃধা

এই ব্যক্তিদের রাজাকাররা ক্যাম্পের সামনে নিয়ে এসে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডগুলো কচুয়া এলাকার মানুষের মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি করে এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারদের নৃশংসতার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে।

বধ্যভূমির তাৎপর্য

কচুয়া থানার এই বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতার একটি প্রতীক। এই বধ্যভূমিতে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, যাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের ভূমিকা এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের মাত্রা তুলে ধরে।

সূত্র:

  • মুক্তিযুদ্ধ কোষ (দ্বিতীয় খণ্ড), সম্পাদনা: মুনতাসীর মামুন লেখক: স্বরোচিষ সরকার

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০