ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২৫ আগস্ট ১৯৭১: কানলা গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২৫ পিএম
২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
২৫ আগস্ট ১৯৭১: কানলা গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

২৫ আগস্ট ১৯৭১ সকালে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম কানলায় একটি মর্মান্তিক গণহত্যা সংঘটিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডে অসংখ্য মানুষ শহীদ হন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী।

ঘটনার বিবরণ

কানলা গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও এর মূল পরিকল্পনাকারী ছিল কুখ্যাত রাজাকার মানিক মিল্কী, যিনি রায়টুটী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কিশোরগঞ্জে পাকিস্তানি সৈন্যদের স্বাগত জানিয়েছিলেন জামিয়া ইমদাদিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও নেজামে ইসলামী-র নেতা মাওলানা আতাহার আলী। পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন, মুসলিম লীগ নেতা আ. আওয়াল খান, মতি কন্ট্রাক্টর প্রমুখের ছত্রছায়ায় এই এলাকায় শান্তি কমিটি, আলবদর ও রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল।

কিশোরগঞ্জের ভাটি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে শুকনো মৌসুমে হানাদার বাহিনী অনেক এলাকায় অভিযান চালাতে পারেনি। বর্ষা মৌসুমে হাওর এলাকায় অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে তারা কানলা গ্রামে হামলা চালায়। মানিক মিল্কী ইটনা থানায় পাকিস্তানি সেনাদলের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে ইটনার সহজ পথ পরিত্যাগ করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাড়াইলের পথে সেনাবাহিনীকে নিয়ে নিজের ইউনিয়নে প্রবেশ করেন এবং পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কানলা গ্রামে আক্রমণ করেন। তার লক্ষ্য ছিল হিন্দু পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া। তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বোঝান যে, এই গ্রামের বাসিন্দারা ভারতের এজেন্ট এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গোপনে আশ্রয় দেয়।

পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথমে বিশিষ্ট ব্যক্তি সুনীল ডাক্তারের বাড়িতে হানা দেয়। সুনীল ডাক্তার পালিয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও হানাদাররা তার পাঁচ বছরের শিশু পুত্র তপনকে হত্যা করে। তারা গ্রামবাসী মিরাশ আলীকে সুনীল ডাক্তারের বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর তারা কানলা গ্রামের হিন্দু বাসিন্দাদের ধরপাকড় শুরু করে। বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষকে বন্দি করে পুরুষদের সেখানেই গুলি করে হত্যা করা হয়। মানিক মিল্কী তার অনুগামীদের দিয়ে গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে মহিলাদের হাত বেঁধে নৌকায় তোলা হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা রায়টুটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে নৌকাটি নদীতে ডুবিয়ে দেয়, ফলে হাতবাঁধা অবস্থায় মহিলাদের সলিল সমাধি ঘটে।

শহীদদের পরিচয়

এই হত্যাকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিরা হলেন:

  • কমলা রানী বর্মণ (স্বামী: দীনেশ চন্দ্র বর্মণ)

  • অমর্ত্য বালা বর্মণ (স্বামী: হাজারী বর্মণ)

  • হৃদয় পাল

  • দীনেশ পাল (পিতা: বাশীরাম পাল)

  • মিরাশ আলী (পিতা: গোমেজ আলী)

  • সুরবালা বর্মণ (স্বামী: বজ্রবাসী বর্মণ)

  • সুভদ্রা বর্মণ (স্বামী: মহাদেব বর্মণ)

  • সুশীল বর্মণ (পিতা: যোগেশ বর্মণ)

  • সুরেন্দ্র চন্দ্র পাল (পিতা: গিরীশ চন্দ্র পাল)

  • ফুলদা রানী পাল (স্বামী: ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল)

  • তপন চন্দ্র পাল (পিতা: সুনীল চন্দ্র পাল)

  • যোগেন্দ্র চন্দ্র পাল (পিতা: গগন চন্দ্র পাল)

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ২য় খণ্ড লেখক: মো. রওশন আলী রুশো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০