ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২৬ আগস্ট ১৯৭১: দাসপাড়া গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
২৬ আগস্ট ১৯৭১: দাসপাড়া গণহত্যা (ইটনা, কিশোরগঞ্জ)

১৯৭১ সালের ২৬শে আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার দাসপাড়া গ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার বাহিনী এক নির্মম গণহত্যা সংঘটিত করে। এই হামলায় অনেক নারী, শিশু ও বৃদ্ধ নিহত হন। কিশোরগঞ্জ জেলায় সংঘটিত ব্যাপক গণহত্যার এটি একটি করুণ দৃষ্টান্ত।

পটভূমি

দাসপাড়া গ্রামটি ইটনা থানার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ছিল, যেখানে প্রধানত জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতেন। এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে ইটনা থানার ছিলনী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ থানা ও সাচনা নৌ-বন্দর মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৮ই আগস্টের এক যুদ্ধে সিরাজুল ইসলাম শহীদ হন। স্থানীয় যুবক ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং জনসাধারণের সমর্থন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সহানুভূতি ও অংশগ্রহণ বাধা দেওয়ার জন্য তারা সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আতঙ্ক সৃষ্টি ও গণহত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনাবলী

২৬ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা দাসপাড়া গ্রামে আক্রমণ চালায়। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ডা. দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি, যিনি একজন সম্মানিত হোমিও চিকিৎসক ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতেন। তাঁকে না পেয়ে তারা তাঁর বাড়িতে আগুন দেয় এবং দুই বৃদ্ধকে হত্যা করে। এরপর তারা দাসপাড়া গ্রামে নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রথমেই নিহত হন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যাদুমনি সাহা। আতঙ্কিত গ্রামবাসী পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন, এবং পাকসেনারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে অনেক নারী, বৃদ্ধ ও শিশুকে হত্যা করে। নিহতদের দেহ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।

শিকার

দাসপাড়া গণহত্যায় নিহত অনেকেরই পরিচয় অজানা থেকে যায়। যাদের শনাক্ত করা গেছে, তারা হলেন:- সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (পিতা: বৈদ্যনাথ বর্মণ) হেমেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (পিতা: বৈদ্যনাথ বর্মণ) মনমোহন বর্মণ (পিতা: মহেন্দ্র বর্মণ) মহেশ চন্দ্র বর্মণ (পিতা: হরাই চন্দ্র বর্মণ) মধুসূদন বর্মণ মানদা বর্মণ (স্বামী: লোকনাথ বর্মণ) দীনেশের মা (স্বামী: কটু বর্মণ) প্রফুল্ল বর্মণ (পিতা: জগৎ বর্মণ) যাদুমনি সাহা (পিতা: দাগুরাম সাহা)

এই গণহত্যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি বীভৎস অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের স্বাক্ষর বহন করে।

সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ (৪র্থ খণ্ড) লেখক: মো. রওশন আলী রুশো অতিরিক্ত তথ্য যাচাই: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট ঐতিহাসিক নথি এবং স্থানীয় সাক্ষ্য।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০