১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই বিয়ানীবাজার, সিলেটের রাধুটিলায় সংঘটিত হয় এক নৃশংস গণহত্যা। এই হত্যাযজ্ঞে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ১৪ জন নিহত হন।
ঘটনার পটভূমি
২৩শে জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কুরিয়ার, গোলাম মোস্তফা, দেশের ভেতরের সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিয়ানীবাজার আসেন। তিনি বিয়ানীবাজার থানা সদরের অদূরে সুপাতলা গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন ঘোষ তাঁকে অত্যন্ত গোপনে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেন। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালালদের মাধ্যমে এই তথ্য গণ্ডলের মজলিশে শুরায় পৌঁছে যায়। সঙ্গে-সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্য ও অসংখ্য রাজাকার মনোরঞ্জন ঘোষের বাড়িতে হাজির হয়। ততক্ষণে গোলাম মোস্তফা তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করে গ্রাম ত্যাগ করেন। কিন্তু মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবার পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হয়।
নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড
পাকিস্তানি বাহিনী মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবারের সকল সদস্যকে বন্দি করে। বন্দিদের মধ্যে ছিলেন: মনোরঞ্জন ঘোষ, তাঁর স্ত্রী হিরণ বালা ঘোষ, কন্যা অমিতা রাণী ঘোষ (চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী), দেড় বছরের শিশুপুত্র মলয় ঘোষ, চারু বালা ঘোষ, নিখিল রঞ্জন ঘোষ, হীরেন্দ্র কুমার ঘোষ, ক্ষেত্রময়ী ঘোষ, মুকুল ঘোষ, সীতা রাণী ঘোষ, উমানন্দ ঘোষ, মহানন্দ ঘোষ, কৃষ্ণ চন্দ্র ঘোষ এবং নরেশ চন্দ্র ঘোষ। তাদের ক্যাম্পে আটকে রেখে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।
২৪শে জুলাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের সবাইকে নির্যাতন করতে-করতে বিয়ানীবাজার-সিলেট সড়কের পাশে অবস্থিত রাধুর টিলায় নিয়ে যায়। টিলার ওপর তাদের এক সারিতে দাঁড় করানো হয়। সশস্ত্র পাকসেনারা ফায়ার করার সঙ্গে-সঙ্গে ঘোষ পরিবারের স্ত্রী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধসহ ১৪টি প্রাণ লুটিয়ে পড়ে। এই গণহত্যার স্থানে তাদের গণকবর দেয়া হয়।
পরবর্তী ঘটনা
মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তাদের বাড়ি লুটপাট করা হয় এবং অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়। এছাড়া, গ্রামের মিছির আলীকেও পাকসেনারা ধরে নিয়ে হত্যা করে।
স্মৃতিরক্ষা
এই নির্মম গণহত্যার স্মরণে রাধুটিলার নামকরণ করা হয় “শহীদ টিলা”। টিলার ওপর “বিয়ানীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ” স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, বিয়ানীবাজার উপজেলা কমপ্লেক্সে অবস্থিত কাঁঠালতলা বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, ৯ম খণ্ড
মন্তব্য করুন