ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের নারীদের যত অর্জন

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের নারীদের যত অর্জন

২০২৪ সালের বছরজুড়েই সবাই কমবেশি ব্যস্ত সময় পার করেছেন। নারীরাও এর ব্যতিক্রম নন। নানা ব্যস্ততায় কেটেছে তাদের বছর, যার মধ্য দিয়ে কেউ কেউ এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেছেন দেশের পতাকা।

আসুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের নারীদের কিছু অর্জনের কথা

সাফ চ্যাম্পিয়ন

২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বিশ্ব দরবারে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমারা। এ দুর্দান্ত অর্জনের কারণে দেশে ফেরার পর সাফ চ্যাম্পিয়ন সাবিনা বাহিনীকে বিমানবন্দর থেকে একটি ছাদ খোলা বাসে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফৌজিয়া করিম

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফৌজিয়া করিম ফিরোজকে ২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক সাহসী নারী (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড) পুরস্কারে ভূষিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এ ঘোষণা দেয়। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার, সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে যেসব নারী নেতৃত্ব দেন, তাদেরকে প্রতি বছর এই পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ফৌজিয়া করিম তাঁর নিজস্ব আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। সেই সঙ্গে তিনি ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এফএলএডি) চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ফৌজিয়া।

ফৌজিয়া ব্যক্তিগতভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে তাদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার মামলা করেন। তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।

রিকতা আখতার বানু

২০২৪ সালের বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। বিবিসির এবারের ১০০ নারীর নামের তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের চিলমারীর রিকতা আখতার বানু। বিবিসি গত ৩ ডিসেম্বর এ তালিকা প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রিকতা আখতারের বাড়ি। তিনি পেশায় একজন নার্স। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হয়েছেন।

রিকতা বানু তাঁর সন্তানকে নিয়ে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা থেকেই এই স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনাটি হলো, ২০০৮ সালে ৯ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী সন্তান তানভীর দৃষ্টি মনিকে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। কিন্তু কয়েকদিন পর স্কুল কর্তৃপক্ষ সে সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে যেতে বলেন। এর পর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল তৈরি করেন রিকতা। থানাহাট, ডাউয়াটারি, জোড়গাছ, গুয়াতিপাড়া ও সরকার পাড়াসহ ব্রহ্মপুত্রে পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা এখানে পড়ালেখা করতে আসে।

ড. ফেরদৌসী কাদরী

ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জনস্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলছেন। গত ৬ ডিসেম্বর ভিয়েতনামের ভিনফিউচার স্পেশাল প্রাইজ লাভ করেন তিনি।

কলেরা, টাইফয়েড ও হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) সুলভ মূল্যের টিকা উদ্ভাবনে অবদান রাখার জন্য তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পান।

ফেরদৌসী কাদরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যাবিভাগ থেকে ১৯৭৫ সালে বিএসসি ও ১৯৭৭ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন/প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর আইসিডিডিআরবির প্রতিষেধক বিদ্যা বিভাগ থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা শেষে একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন।

২০০৮ সালে ফিরদৌসী কাদরী বাংলাদেশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন। তিনি ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিক রোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির বার্ষিক সিএনরাও পুরস্কার পান।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী-তে ভূষিত হয়েছেন। পদ্মশ্রী পুরস্কার ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি। পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী নামে তিনটি বিভাগে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। গত ২২ এপ্রিল ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশের রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চাচা আব্দুল আলীর কাছ থেকে প্রাথমিক গানের পাঠগ্রহণ করেন। পরে এই সংগীত চর্চা সনজিদা খাতুন ও আতিকুল হকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার ছায়ানট এবং বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস (বাফা) এ অব্যাহত থাকে। ২০২১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সেরা মহিলা রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হওয়ার জন্য আনন্দ সঙ্গীত পুরস্কার (২০০২), গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা (২০১১), ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৩ সালে সঙ্গীত সম্মান পুরস্কার, বঙ্গ ভূষণ (২০১৭), ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১৭), পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক সঙ্গীত মহা সম্মান (২০১৭) পুরস্কার পান।

স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম

মার্কিন সাময়িকী টাইমএর করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় এ বছর স্থান পান বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম।

১৯৬৮ সালে ঢাকায় জন্ম মেরিনা তাবাসসুমের। মেরিনা হলিক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৯৪ সালে সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ সালে তিনি নিজের ফার্ম আর্কিটেক্টস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে প্রধান স্থপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল না। তাঁর অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ২০২১ সালে আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড লেটারস অ্যাওয়ার্ডসের সোয়ান পদক পান। এ ছাড়া ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্টএর ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। তিনি ১০ জনের মধ্যে তৃতীয় হন।

সুলতানি আমলের স্থাপত্য রীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১২ সালে নির্মিত ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদের নকশা করেছিলেন মেরিনা তাবাসসুম। এতে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে ছাদ ও দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে মসজিদের ভেতরে আলো প্রবাহের বিষয়টি। অসাধারণ এই নকশা তাঁকে এনে দেয় স্থাপত্যে সম্মানজনক পুরস্কার আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার। আর এই ধারাবাহিকতায় এ বছর টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছেন তিনি।

সাবরিনা রশিদ সেওঁতি

সাবরিনা রশিদ সেওঁতি, তিনি চলতি বছরের ১১ আগস্ট টরন্টোতে আইডব্লিউএ ওয়ার্ল্ড ওয়াটার কংগ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সম্মানজনক ইউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি এই পুরস্কার পান।

সাবরিনা ময়মনসিংহের এক ডাক্তার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন পানিসম্পদ প্রকৌশলী। তিনি মূলত পরিবেশ, জলবায়ু ও পানি সম্পদ নিয়ে কাজ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকে শুরু থেকে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পেয়েছেন অসংখ্য বৃত্তি ও পুরস্কার।

বুয়েট থেকে স্নাতকের পর মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনলোজির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন। এরপর কানাডায় পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স করেন এবং সেখানেই পেয়েছেন গ্র‍্যাজুয়েট রিসার্চ ফেলোশিপ, রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাণীগঞ্জ বাজার গণহত্যা | জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ

ধোবাজোড়া গণহত্যা | মিটামইন, কিশোরগঞ্জ

খারদার গণহত্যা | বাগেরহাট

কানকাটি গণহত্যা, কিশোরগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার এক অধ্যায়

১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: পাকিস্তানি সেনাদের রঘুনাথপুর ঘাঁটিতে মর্টারের আক্রমণ মুক্তিযোদ্ধাদের

৩১ আগস্ট ১৯৭১: সাজিউড়া গণহত্যা (কেন্দুয়া, নেত্রকোনা)

৩১ আগস্ট ১৯৭১: শ্রীরামসি (ছিরামিসি) গণহত্যা

৩১ আগস্ট ১৯৭১: কলাবাগানে পাকিস্তান-অনুগত পুলিশের ওপর হামলা

ক্র্যাক প্লাটুনের অদম্য সাহসিকতা ও ত্যাগের গল্প

৩০ আগস্ট ১৯৭১: দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন

১০

২৮ আগস্ট ১৯৭১: মোগরার বিল গণহত্যা (মোহনপুর, রাজশাহী)

১১

২৮ আগস্ট ১৯৭১: পাকুড়িয়া গণহত্যা (মান্দা, নওগাঁ)

১২

২৮ আগস্ট ১৯৭১: দিরাই ও শাল্লা এলাকা হানাদারমুক্ত হয়

১৩

২৭ আগস্ট ১৯৭১: দেয়াড়া গণহত্যা (খুলনা)

১৪

২৭ আগস্ট ১৯৭১: কচুয়া বধ্যভূমি (বাগেরহাট)

১৫

২৭ আগস্ট ১৯৭১: লাতিন আমেরিকায় পাকিস্তানি গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রস্তাব

১৬

২৬ আগস্ট ১৯৭১: নারী নির্যাতনে ইয়াহিয়ার সৈন্যরা মধ্যযুগের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে

১৭

২৫ আগস্ট ১৯৭১: সিলেটে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমানুষিক অত্যাচার

১৮

২৫ আগস্ট ১৯৭১: মানসা গণহত্যা ও বধ্যভূমি (বাগেরহাট)

১৯

২৭ আগস্ট ১৯৭১: লন্ডনে প্রবাসী সরকারের কূটনীতিক মিশন উদ্বোধন

২০