ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩ কার্তিক ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে পলিথিনের ঘরে থাকেন তফুরা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম
মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে পলিথিনের ঘরে তফুরা

মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মাঠের মাঝখানে পলিথিনের তৈরি ঘরে বসবাস করছেন বিধবা তফুরা বেগম। পলিথিনের এই ঘরটি মাঠের মাঝখানে হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। পলিথিন নিচে থাকার ব্যবস্থা হলেও সেখানে নেই কোনো টিউবওয়েল ও টয়লেট। এসব কাজ সারতে হয় প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে। সব মিলে কখনও খেয়ে আবার কখনও না খেয়েও দিন পার করতে হচ্ছে ৫ সদস্যের এই পরিবারটিকে।

বর্তমানে তিনি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা। তফুরার স্বামী সৈয়দ আলীর বাড়ি পঞ্চগড় পৌর শহরের তেলিপাড়া এলাকায়। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। সৈয়দ আলী তফুরাকে বিয়ে করার পর আরও দুটি বিয়ে করেন। এরপর তাদের সংসারে শুরু হয় অশান্তি।

২০০৬ সালে তফুরা তার মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন জেমজুট এলাকায়। সেখানে বাড়িভাড়া নিয়ে মেয়েকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। কয়েক বছর পর মেয়ে শরিফা খাতুনকে বিয়ে দেন। সেখানে তার ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। সেই সংসার বেশিদিন টেকেনি শরিফার। পরে পঞ্চগড়ের সাঁকোয়া এলাকায় আবারও বিয়ে করেন শরিফা। সেই সংসারে তার আরেকটি মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান জন্মগ্রহণ করার কিছুদিন পরে তার ২য় স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন থেকে শরিফা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

পরে তফুরা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে ও তিন নাতি নাতনিকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। এদিকে মেয়ে মানসিকভাবে বেশি অসুস্থ হওয়ার কারণে অন্যান্য ভাড়াটিয়াদের কাপড়সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট করতে থাকে। এসব ঘটনায় সবাই বিরক্ত হয়ে তাদেরকে ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেয়। কোথাও কোনো থাকার জায়গা না থাকায় দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় স্থানীয়রা পলিথিন দিয়ে একটি তাবু তৈরি করে দেয়। বর্তমানে সেই তাবুতে তিন মাস ধরে বসবাস করছেন তারা।

তফুরার নাতি নয়ন ইসলাম জানায়, আমার নানি ভিক্ষা করে সংসার চালায়। এই ঘরটা এলাকার লোকজন নিজেরাই টাকা খরচ করে তুলে দিয়েছে। এখানে আমরা ৫ জন বসবাস করি। থাকতে খুব কষ্ট হয়।

তফুরা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। কয়েকমাস ধরে তার মাথায় সমস্যা হওয়ায় অন্য ভাড়াটিয়াদের কাপড়সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট করছে। তাই তারা ভাড়া বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না। আমার তো কোনো জমি জায়গা নেই। এলাকার লোকজন স্থানীয় জসিম উদ্দিন নামে একজনের জমিতে পলিথিন দিয়ে আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এখানে কোনো টিউবওয়েল নাই। কষ্ট করে দূর থেকে পানি নিয়ে এসে গোসল করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও আমরা কোনো সহযোগিতাও পাই না। এই ঘরে গরমের সময় প্রচণ্ড গরম করে আর বৃষ্টির সময় ছোট বাচ্চারা খুব ভয় পায়।

স্থানীয় বাবুল ইসলাম বলেন, এরা খুব গরিব মানুষ। অনেকদিন ধরে এই এলাকায় আছে। আগে জুটমিলে কাজ করে খাইতো। হঠাৎ করে এই মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে। পাগল হয়ে যাওয়ার পর ভাড়াও কেউ রাখে না। পরে আমরা এলাকাবাসী হাট বাজারে টাকা তুলে প্লাস্টিক দিয়ে এই ঘরটি করে দিয়েছি। সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন এদের জন্য যে কোনো জায়গায় হোক ছোটখাটো একটা ঘর যেন করে দেওয়া হয়।

স্থানীয় আসাদুল্লাহ দুলু বলেন, ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও তাদেরকে এই ঘরের মধ্যে থাকতে হয়। তাদের কোনো টিউবওয়েল নেই। তারা বাড়ির পাশের স-মিলের টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে।

ইউপি সদস্য উসমান গণি বলেন, তারা এখনও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো কিছু পাচ্ছেনা। সরকার থেকে যা আসে সেটা আমরা ধাপে ধাপে সবার মাঝে বিতরণ করছি।

ময়দানদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, তাদের বিষয়ে আমার জানা নেই। মেম্বার বলতে পারবে। তারা যদি এই ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়ে থাকে তাহলে তো সহযোগিতা পাবে। এখনতো কোনো কিছু দিতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র লাগে। জানি না তাদের আছে কীনা?

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তৌকির আহমেদ বলেন, ওই নারী যদি বিধবা হয় এবং তার মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হয় সেক্ষেত্রে আবেদন করেলে আমরা ভাতার ব্যবস্থা করে দেব।

এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, ময়দানদিঘী ইউনিয়নের অসহায় বিধবা নারী তফুরা বেগমের ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। ময়দানদিঘীতে সরকারি কোনো খাস জমি নেই। থাকলে সেখানে তাকে কিছু করে দেওয়া যেত। আশ্রয়নের যে ঘরগুলো ময়দানদিঘীতে আছে সেগুলোও ফাঁকা নেই। ময়দানদিঘী ইউনিয়নের পাশের কোনো ইউনিয়নে ফাঁকা ঘর থাকলে সেখানে তাদের যাওয়ার সুযোগ আছে। আর যদি তিনি সেখানেই থাকতে চান সেক্ষেত্রে কোনো বৃত্তবান ব্যক্তি যদি তাকে জায়গা দেন তাহলে আমরা টিন দিয়ে ঘর করে দিতে পারি।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০