ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১:১৭ এএম
ঐতিহাসিক সেই আটটি ডাকটিকিট। ছবি: সংগৃহীত

২৬ জুলাই ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি ঘটনাবহুল ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনে লন্ডনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট উন্মোচন থেকে শুরু করে ভারতে শরণার্থী সংকট, পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, জাতিসংঘের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধযুদ্ধ—বিভিন্ন ঘটনা এই দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নিচে এই দিনের সকল ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি সমন্বিত প্রতিবেদন দেওয়া হলো।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট উন্মোচন

২৬ জুলাই ১৯৭১-এ লন্ডনের হাউস অব কমন্সের হারকোর্ট হলে এক ঐতিহাসিক ঘটনার সূচনা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আটটি ডাকটিকিট সাংবাদিকদের সামনে উন্মোচন করা হয়। এই ডাকটিকিটগুলোর নকশা করেছিলেন প্রবাসী ভারতীয় বাঙালি শিল্পী বিমান মল্লিক। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সিদ্ধান্ত এবং যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সংসদ সদস্য জন স্টোনহাউসের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এই ডাকটিকিটগুলো উন্মোচন করেন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এই ডাকটিকিট বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়কে প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটি আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে।

সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট। ছবিতে বিমান মল্লিক, আবু সাঈদ চৌধুরী ও জন স্টোনহাউজ।ছবি: সাংবাদিকদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট। ছবিতে বিমান মল্লিক, আবু সাঈদ চৌধুরী ও জন স্টোনহাউজ।

একই দিনে কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে একটি অনুষ্ঠানে এই ডাকটিকিটগুলো প্রদর্শন করা হয়। মিশন প্রধান এম হোসেন আলী জানান, ২৯ জুলাই থেকে বাংলাদেশ মিশনে এই ডাকটিকিটগুলো জনসাধারণের জন্য বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি কাউন্টার খোলা হবে। এই ডাকটিকিটগুলো বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক ডাক যোগাযোগে ব্যবহৃত হবে, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়কে আরও জোরালো করে।

মওলানা ভাসানীর বিবৃতি

এই দিনে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, “বাম শক্তিসমূহকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য আমাদের প্রিয় দেশের স্বাধীনতা। আমরা যে যে মতাদর্শে বিশ্বাস করি না কেন, আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—স্বাধীনতা অর্জন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে কিছু অপশক্তি ও মীরজাফর পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি এই অপশক্তিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া, কয়েকদিন আগে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল যে মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বামপন্থী দলগুলো নিয়ে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করছেন। এই দিনে তিনি এই খবর অস্বীকার করে বলেন, বাম, ডান বা মধ্যপন্থী—সকলের লক্ষ্য এখন একটাই, তা হলো স্বাধীনতা।

ঢাকায় এদিন

২৬ জুলাই ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব টুঙ্কু আবদুর রহমান চার দিনের ঢাকা সফর শেষে ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হন। তার এই সফর পাকিস্তানি শাসনের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য ছিল, যদিও তার সফরের বিস্তারিত ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশিত হয়নি।

ভারতে এদিন

ভারতে এই দিনে শরণার্থী সংকট ছিল একটি প্রধান বিষয়। উত্তর প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. রাজেন্দ্রকুমারী বাজপেয়ী ইরাফতগঞ্জ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, উত্তর প্রদেশ সরকার এই শিবিরে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত এক লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। এই শিবিরটি সম্প্রতি পতিত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল।

একই দিনে দিল্লিতে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পি সুন্দরিয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়, তবে চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। তিনি বলেন, “ভারত চীনের ভয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না—এই ধারণা মিথ্যা। বরং ভারত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভয় পাচ্ছে।” তিনি ভারত সরকারকে দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, এতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে। তিনি আরও জানান, স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিটি সদস্য ও কর্মী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের পাশে কাজ করবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে ভারত সরকার কোনো বাঁধাধরা নীতি গ্রহণ করেনি। জাতীয় ও বাংলাদেশের স্বার্থে যখনই প্রয়োজন হবে, তখনই স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

পাকিস্তানে এদিন

পাকিস্তান সরকার এই দিনে এক বিবৃতিতে ভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান কখনোই ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি। ভারতের অভিযোগকে তারা “ষড়যন্ত্রমূলক, বানোয়াট ও মিথ্যাচার” বলে অভিহিত করে। এর আগে ১৩ জুলাই ভারত সরকার দাবি করেছিল যে পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।

যুক্তরাজ্যে পাকিস্তানের হাইকমিশনার সালমান আলীর অনুরোধে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হোমের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানকে উন্নয়ন সাহায্য পেতে হলে বাংলাদেশ সংকটের রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নীতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক মহলে এদিন

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এই দিনে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন ও পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা নিরসন এবং শরণার্থী সংকটের বিষয়ে জাতিসংঘের অবস্থান ব্যক্ত করেন। উ থান্ট বলেন, জাতিসংঘ সবসময় শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে। তিনি উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, জাতিসংঘের দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত। গত সপ্তাহে উ থান্ট নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মতামত জানতে চান। এই বার্তা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের এবং ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে উ থান্টের এই চিঠির বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে উ থান্টের প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তানকে সমান কাতারে রাখায় ভারতীয় নেতাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন বলেন, তিনি উ থান্টকে জানিয়েছেন যে প্রতিদিন ৪০ হাজার শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করছে, এবং জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা কীভাবে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সাহায্য করতে পারবে, তা তারা বুঝতে পারছেন না। অন্যদিকে, পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আগা শাহি বলেন, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। জেনেভার কূটনৈতিক মহলের সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাব মেনে নিয়েছে, যদিও ভারত এ বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেনি।

মার্কিন সিনেটে এই দিনে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র চার্লস ব্রে বলেন, শরণার্থীবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কেনেডির অভিযোগ অমূলক। কেনেডি মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গে গণহত্যা ও নিপীড়নের বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। চার্লস ব্রে বলেন, কেনেডি যদি গোপন কূটনৈতিক তথ্য ফাঁস করতে থাকেন, তবে পররাষ্ট্র দপ্তর তাকে সাহায্য করতে পারবে না।

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের কাছে একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে তারা বলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের গোপন সামরিক বিচারের কথা বলেছেন, যা সুবিচারের পরিপন্থী। তারা শেখ মুজিবের প্রাণনাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদিন

২৬ জুলাই ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রতিবেদনে, ‘শরণার্থীদের অন্য রাজ্যে পাঠানোর ব্যবস্থা নৈরাশ্যজনক’ শিরোনামে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে শরণার্থীদের পাঠানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর। এর ফলে সীমান্ত এলাকায় শরণার্থী সাহায্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গে ৫২ লক্ষ ৭২ হাজার ১৫০ শরণার্থী এসেছেন, এবং খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে, ‘শরণার্থী সেবায় টাটা গোষ্ঠী সংস্থা’ শিরোনামে বলা হয়, টাটা শিল্পগোষ্ঠী শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ কাজ শুরু করেছে। তারা চিকিৎসক, সমাজসেবী ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি সাহায্যকারী দল গঠন করেছে এবং এর জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়া, টাটা ট্রাস্ট এবং অন্যান্য সংস্থা বাংলাদেশ সাহায্য কমিটিকে অর্থ সাহায্য প্রদান করেছে।

দেশজুড়ে প্রতিরোধযুদ্ধ

২৬ জুলাই মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালায়।

কুমিল্লার মনোরা সেতু: মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ গড়লেও শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। এই হামলায় চারজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

কুমিল্লার নওগাঁও-আকসিনা এলাকা: ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর অ্যামবুশ করে। এতে সাতজন পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং চারজন আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর একজন যোদ্ধা গুরুতর আহত হন। পরে সাইদাবাদ থেকে কসবাগামী পাকিস্তানি একটি কোম্পানির ওপর অ্যামবুশে ২১ জন পাকিস্তানি সেনা ও একজন রাজাকার নিহত এবং নয়জন আহত হয়।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল কালিদাস পাড়া: কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার এই যুদ্ধে ১৯ জন রাজাকার নিহত এবং সাতজন আহত হয়।

কুমিল্লার নরসিংহ: মুক্তিবাহিনী সাতজন রাজাকারের একটি দলের ওপর অ্যামবুশ করে। তারা দুটি রাইফেল, চারটি হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি ওয়্যারলেস সেট এবং ১২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। সাতজন রাজাকারকে আটক করে মুক্তিবাহিনী তাদের ঘাঁটিতে নিয়ে যায়।

নোয়াখালীর নরিমপুর: রেকি করতে গিয়ে রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার সুবেদার ওয়ালিউল্লাহকে ফাঁদে ফেলে আটক করার চেষ্টা করে। তিনি তাৎক্ষণিক বুদ্ধি দিয়ে একজন রাজাকারকে গুলি করে পালিয়ে যান।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তাদের ভারতে আশ্রয়

এই দিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চারজন বাঙালি কর্মকর্তা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নেন। তারা হলেন মেজর আবু তাহের (স্বাধীনতার পর বীর উত্তম ও কর্নেল), মেজর এম এ মঞ্জুর (স্বাধীনতার পর বীর উত্তম ও মেজর জেনারেল), মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ (স্বাধীনতার পর বীর উত্তম ও কর্নেল) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল গনি পাটোয়ারি (স্বাধীনতার পর বীর প্রতীক ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল)। মেজর মঞ্জুর তার পরিবারসহ ভারতে আসেন। এই কর্মকর্তারা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২৬ জুলাই ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বহুমুখী দিকগুলোকে প্রতিফলিত করে। লন্ডনে ডাকটিকিট উন্মোচনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনীর সাহসী অভিযান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে শক্তিশালী করে। ভারতে শরণার্থী সংকট এবং জাতিসংঘের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এই সংগ্রামের জটিলতাকে আরও স্পষ্ট করে। মওলানা ভাসানীর ঐক্যের আহ্বান এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই দিনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দৃঢ়তা ও বৈশ্বিক প্রভাবকে তুলে ধরে।

তথ্যসূত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র চতুর্থ, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ খণ্ড।

দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই ১৯৭১।

দৈনিক পাকিস্তান, ২৭ জুলাই ১৯৭১।

দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ২৭ জুলাই ১৯৭১।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ জুলাই ১৯৭১।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০