

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পেছনে দেশ-বিদেশের বহু মানুষের একক ও মিলিত প্রচেষ্টা ছিল উল্লেখযোগ্য। অজস্র ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১১ মে ১৯৭১-এর ঘটনাগুলো একটি বিশেষ অধ্যায়।
মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি এই দিন সিনেটে জানান, পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীতে জড়িত না হওয়ার অবস্থান সত্ত্বেও তা ঘটেছে। এ সময় তিনি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া, বাংলাদেশি শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য ভারতের আবেদনে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তার মতে, পূর্ব পাকিস্তানের সংকট অবজ্ঞা করার মতো নয় এবং এটি নিরপরাধ লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বিশ্বের প্রতিটি সরকারের কর্তব্য।
ব্রিটেন ও জাতিসংঘের ভূমিকা ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হোম কমন্স সভায় বলেন, পাকিস্তান গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। তিনি জানান, ব্রিটিশ সরকার জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে আগ্রহী।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারতের সহমর্মিতা ও উদ্যোগ ভারতের জলন্ধরের পাঞ্জাব কেশরী ও দৈনিক হিন্দ সমাচার পত্রিকা দুটি শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য তহবিল গঠন করে। লালা জগৎ নারায়ণ এই দিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হাতে বাংলাদেশ তহবিলের জন্য এক লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
পশ্চিমবঙ্গসহ সারা ভারতের প্রায় দুই লাখ ব্যাংক কর্মচারী ১১ মে বাংলাদেশ দিবস পালন করেন। কলকাতার ব্যাংক কর্মচারীরা বাংলাদেশের সমর্থনে শোভাযাত্রা শেষে পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনের সামনে সমবেত হন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক ব্যাংক সমিতি শরণার্থীদের সাহায্যে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান এম হোসেন আলীর হাতে ৮০ হাজার টাকার চেক তুলে দেয়।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি নুরুল আমিন এই দিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপদেষ্টা এম এম আহমদ ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বিশ্ব মুসলিম কংগ্রেস এই দিন ভারতের উসকানিমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও ঐক্যের পক্ষে বার্তা প্রেরণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের ময়দান চট্টগ্রামের শুভপুর সেতুর দুই পাড়ে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখি যুদ্ধ হয়।
হাতিয়া দখলের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
কুমিল্লার মীরগঞ্জে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তীব্র আঘাত হানে। বিপর্যস্ত সেনারা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে গেলে মুক্তিবাহিনী সেই অস্ত্র উদ্ধার করে।
গোপালগঞ্জের মানিকহার গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির চারপাশ থেকে আক্রমণ চালায়।
ঢাকায় শান্তি কমিটির ২৫টি ইউনিয়ন শাখা গঠিত হয়।
সূত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস
পূর্বদেশ, ১২ মে ১৯৭১
আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ভারত, ১২ মে ১৯৭১
মন্তব্য করুন