

মে মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতা পায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন বাড়ে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান শক্তিশালী হয়। ভারত শরণার্থী সংকট মোকাবিলা করে এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত রাখে।
মে মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি
১ মে ১৯৭১
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জে. ডব্লিউ. ফুলব্রাইট বাংলাদেশে পাকিস্তানি বর্বরতার নিন্দা করেন এবং সাহায্য বন্ধের দাবি তোলেন।
ব্রিটিশ সংসদে পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
২ মে ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাসঘাতকদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়।
পিরোজপুরে গেরিলা বাহিনী গঠন করে সিরাজ শিকদার।
পাকিস্তানি সেনারা রামগড় ও ফরিদপুরে গণহত্যা চালায়।
৩ মে ১৯৭১
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানায় কমিউনিস্ট পার্টি।
জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট বাংলাদেশের সংকট নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থীদের জন্য সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়।
৪ মে ১৯৭১
যুক্তরাজ্যের সংসদে বাংলাদেশ নিয়ে বিতর্ক হয়, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব পাস হয়।
৫ মে ১৯৭১
পাকিস্তান প্রথমবারের মতো স্বীকার করে যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বাংলাদেশে মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ চান।
৬ মে ১৯৭১
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন করে।
ইন্দিরা গান্ধী ভারতে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের আহ্বান জানান।
মুক্তিযোদ্ধারা আখাউড়া ও দিনাজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালায়।
৭ মে ১৯৭১
ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নেন।
কলকাতা পৌরসভা বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দাবি করে।
৮ মে ১৯৭১
ভারতের পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা শরণার্থী সংকট নিয়ে বৈঠক করেন।
মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানী সীমান্তবর্তী ঘাঁটি পরিদর্শন করেন।
৯ মে ১৯৭১
জাতিসংঘের শরণার্থী প্রতিনিধিদল ভারতে শরণার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা ও কক্সবাজারে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়।
১০ মে ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদল ইউরোপ সফর শুরু করে।
ভারতে শরণার্থী সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
১১ মে ১৯৭১
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর কেনেডি শরণার্থীদের সাহায্যের আহ্বান জানান।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে নুরুল আমিনের বৈঠক হয়।
১২ মে ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ সরকারের আবেদন।
জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
১৩ মে ১৯৭১
জাতিসংঘের সামাজিক পরিষদে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহী ও কুমিল্লায় গেরিলা আক্রমণ চালায়।
১৪ মে ১৯৭১
ইন্দিরা গান্ধী বুদাপেস্টে বিশ্ব শান্তি কংগ্রেসে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন।
ভারতের বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের সমর্থনে বিবৃতি দেন।
১৫ মে ১৯৭১
মাওলানা ভাসানী পাকিস্তানি শাসনের বিরোধিতা করেন।
ব্রিটিশ সংসদে পাকিস্তানকে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব উঠে।
১৬ মে ১৯৭১
ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দেন।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম সীমান্ত পরিদর্শন করেন।
১৭ মে ১৯৭১
জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল ভারতে শরণার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ও পাবনায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে।
১৮ মে ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের দাবি তোলেন।
১৯ মে ১৯৭১
জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট শরণার্থীদের সাহায্যের আহ্বান জানান।
ভারতের পুনর্বাসনমন্ত্রী শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত তহবিলের ঘোষণা দেন।
২০ মে ১৯৭১
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, "প্রবাসী সরকারই জাতীয় সরকার"।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে।
২১ মে ১৯৭১
বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবি জানায়।
কলকাতায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি গঠিত হয়।
২২ মে ১৯৭১
সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খান পাকিস্তানের সমালোচনা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষণ দেন।
২৩ মে ১৯৭১
ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের ইঙ্গিত দেন।
২৪ মে ১৯৭১
ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ওঠে।
মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে।
২৫ মে ১৯৭১
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পুনরায় সম্প্রচার শুরু করে।
ভারতের সংসদে বাংলাদেশ নিয়ে সর্বদলীয় আলোচনা হয়।
২৬ মে ১৯৭১
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী পালিত হয়।
ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন।
২৭ মে ১৯৭১
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় ফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর কেনেডি পাকিস্তানের সমালোচনা করেন।
২৮ মে ১৯৭১
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
কলকাতা পৌর করপোরেশন বাংলাদেশের সমর্থনে রাস্তার নাম পরিবর্তন করে।
২৯ মে ১৯৭১
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, "বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র"।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর কেনেডি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।
৩০ মে ১৯৭১
মাওলানা ভাসানী বলেন, "যুক্ত পাকিস্তানের ভিত্তিতে মীমাংসা সম্ভব নয়"।
মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে।
৩১ মে ১৯৭১
ভারত জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত নেয়।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেন।
মন্তব্য করুন