

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থন বাড়ছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের নেতা ও সংস্থা পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ফুলব্রাইটের তীব্র প্রতিবাদ
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর জে. ডব্লিউ. ফুলব্রাইট পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার নিন্দা করে বলেন, "এখানে নীরবতা মানে বর্বরতাকে সমর্থন করা।" তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সমালোচনা করে বলেন, জন রোডের চিঠিতে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিবরণ থাকলেও তা গোপন রাখা হয়েছে। রোড তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, "পাকিস্তানি সেনারা নিরস্ত্র বাঙালি নিধন করছে, বিশেষভাবে টার্গেট করছে বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু সম্প্রদায়কে।"
ব্রিটেনে জাডের কড়া ভাষা
ব্রিটিশ বিরোধী দলের নেতা হ্যারল্ড উইলসনের সংসদীয় সচিব ফ্রাংক জাড ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পাকিস্তানকে সব ধরনের সাহায্য বন্ধের দাবি জানান। এদিকে, ব্রিটিশ সাহায্য সংস্থা অক্সফাম ও ওয়ার অন ওয়ান্ট বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য তহবিল গঠনের আহ্বান জানায়।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সতর্কবার্তা
সোভিয়েত সংবাদপত্র প্রাভদা সতর্ক করে দিয়ে লেখে, "পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্যই ক্ষতিকর হবে এবং এটি সমগ্র এশিয়ার শান্তির জন্য হুমকি।" এদিন ঢাকা ও কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় ও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্তাব উভয় দেশ গ্রহণ করে।
ক্রিকেট মাঠে বাঙালি প্রতিবাদ
ব্রিটেনের উস্টারশায়ারে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন প্রায় ৫০০ বাঙালি "বাংলাদেশ স্বীকৃতি দাও", "খুনিদের বিচার কর" স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
ভারত ও পাকিস্তানে পরিস্থিতি
ভারতের এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য বিশেষ ভর্তি সুবিধা ও শিক্ষকদের জন্য অস্থায়ী চাকরির ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিককে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দিলেও পূর্বে বহিষ্কৃত সাংবাদিকদের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানায়।
সীমান্তে পাকিস্তানি আগ্রাসন
পাকিস্তানি সেনারা ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের রাধিকাপুর রেলস্টেশনে গোলাবর্ষণ করে, যাতে এক শরণার্থী নিহত ও ছয় ভারতীয় আহত হয়। এদিকে, কুমিল্লার লাকসামে মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশনে পাকিস্তানি সেনাদের গাড়িবহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক ও দুই; দৈনিক পাকিস্তান, পূর্বদেশ ও আনন্দবাজার পত্রিকা, ২ মে ১৯৭১।
মন্তব্য করুন