ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

৩০ এপ্রিল: মুক্তিযুদ্ধের এক রক্তঝরা অধ্যায়

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৯ এএম
ত্রিপুরায় বাংলাদেশি শরণার্থী: ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল-এসময় প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। প্রাণ বাঁচাতে ভারতের ত্রিপুরার মোহনপুরের একটি স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশিরা।

১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ও বেদনাবিধুর দিন হিসেবে চিহ্নিত। এদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন জানান নেপালের প্রধানমন্ত্রী, অন্যদিকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা চরমে পৌঁছায় রংপুর ও শেরপুরে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নেপালের প্রধানমন্ত্রী বিপি কৈরালা কাঠমুন্ডু থেকে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের বিজয় কামনা করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানান। অন্যদিকে, তুরস্কের আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত সেন্টো সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধি ইফতেখার আলী মুক্তিযুদ্ধকে "ভারতীয় চক্রান্ত" বলে উল্লেখ করে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের ঘোষণা দেন।

ঢাকায় সামরিক আদেশ সেদিন ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যাতে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও কৃষিকাজে বাধা দিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এছাড়া, ৩০ জুনের মধ্যে সকল বকেয়া খাজনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

রংপুরের দমদমা ব্রিজে নির্মম হত্যাকাণ্ড ৩০ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে হানাদার বাহিনী হামলা চালায়। তারা অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ অধিকারী, চিত্তরঞ্জন রায়, কালাচাঁদ রায় ও তার স্ত্রী মঞ্জুশ্রী রায়কে ধরে নিয়ে যায়। দমদমা ব্রিজের কাছে বাঁশঝাড়ে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশগুলি গণকবর দেওয়া হয়। একই রাতে অধ্যাপক আব্দুর রহমান ও সোলায়মানকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

শেরপুরের জগৎপুর গণহত্যা সকাল সাড়ে আটটায় শেরপুরের ঝিনাইগাতির জগৎপুর গ্রামে পাকিস্তানি সেনারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তিন দিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করলে আতঙ্কিত গ্রামবাসী রঙ্গবিলের দিকে পালাতে থাকে। হানাদাররা ৪২ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে। যারা পালাতে পেরেছিলেন, তারা ভারতের মেঘালয়ে আশ্রয় নেন।

বিদেশী নেতাদের বক্তব্য লিবিয়ার শাসক কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, "ইয়াহিয়া খানের পদক্ষেপ সঠিক। লিবিয়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।"

শান্তি কমিটির তৎপরতা রংপুর, সিলেট ও খুলনায় শান্তি কমিটি মিছিল ও বক্তৃতার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। সিলেট বেতার থেকে নাজমুল হোসেন ও খন্দকার আবদুল জলিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তার আহ্বান জানান। খুলনায় সবুর খান মুক্তিবাহিনীকে "দেশদ্রোহী" আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ মুক্তিবাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানী খাগড়াছড়ির রামগড় ঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং চট্টগ্রামের যুদ্ধের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পঞ্চগড়ের মাগুরামারীতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও দুইজন গুরুতর আহত হন। চট্টগ্রামের চিকনছড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর মুখে পিছু হটে একটি বাগানবাড়িতে আশ্রয় নেন।

সূত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম খণ্ড)

দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ১ মে ১৯৭১

দৈনিক পাকিস্তান, ১ মে ১৯৭১

রক্তে ভেজা একাত্তর: মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম)

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০