

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা রচনায় দেশি-বিদেশি অসংখ্য ব্যক্তি ও ঘটনার অবদান রয়েছে। এখানে তুলে ধরা হলো একাত্তরের এই দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি।
আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় সমর্থন ভারতের রাজস্থান বিধানসভায় সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা এক ঐকমত্যে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি জোরালো দাবি জানান। তাঁদের প্রস্তাবে পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খানের নৃশংসতা থেকে বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
নয়াদিল্লিতে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হীরেন মুখার্জি লোকসভার জরুরি অধিবেশন ডাকার দাবি তোলেন। তাঁর মতে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভারতীয় সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও নাগরিক হত্যার মতো ঘটনায় সংসদীয় গণতন্ত্রে নিরব থাকা যায় না।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতির সভাপতি অজয় মুখোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য ওষুধ, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সহায়তা পাঠানোর জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানান।
এদিন কলকাতায় হুগলি জেলার শতাধিক বাঙালি মুসলমান বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশনের হোসেন আলীকে সংবর্ধনা জানান। আঞ্জুমানে মহসিনিয়াতের আয়োজনে হাওড়া থেকে মিছিল করে তাঁরা সার্কাস অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত মিশনে পৌঁছান।
সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ শীর্ষক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সংগ্রামকে তুলে ধরে।
লন্ডনে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিরা বিক্ষোভ করেন। ‘খুনিরা ফিরে যাও’, ‘যুদ্ধ বন্ধ করো’—এ ধরনের স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁরা পাকিস্তানি দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘেরাও করেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই প্রতিবাদ স্থান পায়।
জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠানো পাকিস্তান সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল।
পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা রেডিও পাকিস্তান জানায়, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, তবে এর বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে।
ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ১ মে থেকে ফুলবাড়িয়া, শাহজাহানপুর রেল কলোনি ও সচিবালয় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এছাড়া শহরের সব রাজনৈতিক স্লোগান মুছে ফেলতে বাধ্যতামূলক করা হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ময়মনসিংহ, যশোর ও খুলনায় সেনা ঘাঁটি পরিদর্শন করেন।
সীমান্তে সংঘর্ষ যশোরের বয়রা সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা ভারতীয় বিএসএফের ওপর গোলাবর্ষণ করে। উত্তরে হিলি সীমান্তেও একইভাবে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
রামগড়ের নিকটবর্তী হেঁয়াকুতে পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। প্রথম দফায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানিরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। তবে পরে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে রামগড় দখলের চেষ্টা করে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ফেনী দখল করে নেয়। সিলেট দখলের খবরও এদিন প্রচারিত হয়।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড), দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ, ৩০ এপ্রিল ১৯৭১, আনন্দবাজার পত্রিকা, কলকাতা, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল ১৯৭১
মন্তব্য করুন