ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

২২ এপ্রিল ১৯৭১: মাদারীপুরে পাকিস্তানি হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৩১ পিএম
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৭ এএম
ছবি: অমিয় তরফদার

১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গভীর চিহ্ন এঁকেছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ঘটনা এই দিনে বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রামে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।

ঐতিহাসিক বিবৃতি

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এই দিনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে বলেন, ধর্ম ও জাতীয় অখণ্ডতার ছদ্মবেশে কিছু ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছে। তিনি বাঙালির বিজয়ের বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের অমান্য করে দীর্ঘ ২৩ বছর পূর্ব বাংলাকে উপনিবেশে পরিণত করেছিল। ভাসানী বিশ্বের শান্তিপ্রেমী রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাকম্যাহোন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতার জন্য শোক প্রকাশ করেন। তিনি পাকিস্তানের শাসকদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন জীবনের আর ক্ষতি না হয় এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি

এদিন দেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে পাকিস্তানি বাহিনী ফেনী আক্রমণ করে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সঙ্গে সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

উত্তরাঞ্চলে হিলিতে সীমান্তের কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ চালায়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা সেই হামলা প্রতিহত করেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

মাদারীপুরে পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

বগুড়া শহরে পাকিস্তানি বাহিনী কোনো বাধা ছাড়াই প্রবেশ করে, যা শহরের পতন ঘটায়।

রাজশাহী থেকে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল নওগাঁয় প্রবেশ করে এবং গুলি চালিয়ে বহু মানুষকে হতাহত করে।

ময়মনসিংহের মধুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র বোমাবর্ষণের মুখে হালুয়াঘাটে পিছু হটতে বাধ্য হন।

সংকটময় পরিস্থিতি

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে, মুক্তিযোদ্ধাদের দৃঢ় মনোবল ও অসীম সাহসিকতায় অনেক এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধ জারি ছিল।

সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র, দ্বিতীয় ও ত্রয়োদশ খণ্ড; বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, দুই, সাত ও এগারো; দৈনিক পাকিস্তান, ২৩ এপ্রিল ১৯৭১

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মহান বিজয় দিবস: গৌরবের দিনে প্রশ্নের ছায়া

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ের এক ঘটনাবহুল দিন

পরের নোবেলটি কার? ইউনুস না শফিক?

এই পতাকা কাদের? / কে চেয়েছে এই পতাকা???

এখন আমাদের ত্রাণকর্তা কে? / ইউনুস, ডোভাল না রজার???

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

১০

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

১১

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

১২

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

১৩

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

১৪

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১৫

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১৬

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১৭

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৮

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৯

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

২০