ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

এটা নারী কমিশন, নাকি ইউনুস সরকারের দীর্ঘায়িত ক্ষমতার সাইনবোর্ড?

“এটা নারী অধিকার নয়, এটা পুরোদমে শেখ হাসিনাকে গালিগালাজ আর ইউনুস সরকারের গুণগান করা একপেশে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা”
প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
০৫ মে ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
০৫ মে ২০২৫, ০৭:৪২ পিএম
এটা নারী কমিশন, নাকি ইউনুস সরকারের দীর্ঘায়িত ক্ষমতার সাইনবোর্ড?

যখন নারী কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ পেল, তখন ইসলামপন্থী দলগুলো—হেফাজতে ইসলাম, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন—গলা ফাটিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে লাগল। কেউ বলল এটা ইসলামবিরোধী, কেউ বলল এটি হিন্দু নারী আইন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। গালাগালি, হুঁশিয়ারি, সাংবাদিক সম্মেলন—সবই চলল। আর ঠিক তখনই, একেবারে ক্যামেরার সামনে ড. ইউনুস চওড়া হাসি দিয়ে বললেন—

“এই রিপোর্ট আমার সরকারের অধীনেই বাস্তবায়ন করতে চাই। বিশ্ব নারী সমাজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে—এটা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব।”

এই হাসিমাখা ঘোষণা শুনেই আমার মাথায় খটকা লাগল। যে সরকার শুরু থেকেই ইসলামপন্থীদের মন রক্ষা করে এসেছে, হেফাজত-জামায়াতকে একটাও রাগানোর মতো সিদ্ধান্ত নেয়নি, তারা হঠাৎ করে নারী অধিকার নিয়ে এইরকম বিপ্লবী মার্কা রিপোর্ট প্রকাশ করল— সত্যিই কি নারী অধিকার রক্ষার জন্য? নাকি অন্য কোনো খেলা?

সন্দেহ থেকেই আমি বসে গেলাম রিপোর্ট পড়তে। ৩১৮ পৃষ্ঠার বিশাল প্রতিবেদন। পড়তে পড়তে যা বুঝলাম—এটা নারী অধিকার নয়, এটা পুরোদমে শেখ হাসিনাকে গালিগালাজ আর ইউনুস সরকারের গুণগান করা একপেশে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা। কোনো বাস্তব সমস্যা, উন্নয়ন বা গঠনমূলক প্রস্তাব নেই। এর ভেতরে শুধু রয়েছে:

পূর্ববর্তী নির্বাচিত সরকারকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা

এবং বর্তমান অনির্বাচিত সরকারকে ‘গণতন্ত্রের রক্ষক’ সাজানোর প্রচেষ্টা

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো

নিচে আমি রিপোর্ট থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো তুলে ধরছি। আপনারা পড়ে বিচার করুন—এগুলো কি আসলেই নারী অধিকারের জন্য? নাকি আরও গভীর কোনো ষড়যন্ত্র?

১. রিপোর্টের শুরুতেই নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা!

রিপোর্টের প্রথম ১ থেকে ৩৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শুধু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা—কে নির্বাচন করবে, কোন শর্তে নির্বাচন হবে, কীভাবে দল গঠিত হবে। এমনকি দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতিও নির্ভর করবে কতজন নারী সদস্য আছে তার উপর। এটা পড়লে মনে হয়, এটি নারী অধিকার কমিশন নয়, বরং নির্বাচন কমিশনের বিকল্প প্রবিধান।

২. ৩৩% নারী না থাকলে কোনো নির্বাচন নয়—সময়সীমা ২০৩৩!

তারা বলছে, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলে প্রতিটি স্তরে ৩৩% নারী না থাকলে নির্বাচন করা যাবে না। এই নিয়ম পূরণে সময় দেওয়া হয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ, সোজা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অলিখিত ম্যান্ডেট। সরাসরি বলা হয়েছে—“আমরা এখনই নির্বাচন করব না—নারী অধিকার পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সরকার চালাব।” এটা কি নারী অধিকারের কথা, নাকি নির্বাচনী স্থবিরতার বৈধতা তৈরি?

৩. স্থানীয় সরকার নির্বাচন চালু থাকবে—কেন্দ্রীয় নির্বাচন বন্ধ!

জাতীয় নির্বাচন বন্ধ রাখতে চায়, কিন্তু উপজেলা, ইউনিয়ন, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন চালু রাখার সুপারিশ করেছে। এতে সুবিধা হবে তৃণমূল নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে এনজিও ও ইউনুসপন্থীদের মাধ্যমে। তাহলে আসল লক্ষ্য কি নারীকে নেতৃত্বে আনা, না ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ছলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন বন্ধ রাখা?

৪. সংবিধানের ৭০ ধারা বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার সুপারিশ

৭০ ধারা মানে দলীয় হুইপ ভাঙলে এমপি পদ হারায়। তারা বলছে এটা বাতিল করতে হবে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা সরাসরি রাজনৈতিক কাঠামো বদলের পরিকল্পনা। কিন্তু নারীর এতে কী উপকার হলো?

৫. পরপর দুইবার প্রধানমন্ত্রী, এমপি, বা দলপ্রধান হওয়া যাবে না!

এই প্রস্তাব শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে নিষ্ক্রিয় করার উদ্দেশ্য। কেউ যদি জনগণের ভোটে তিনবারও জয়ী হয়, তাকে থামানোটা কি নারী অধিকারের পরিপন্থী নয়?

৬. “বাঙালি” শব্দ বাদ দিয়ে “বাংলাদেশি” শব্দ চালুর সুপারিশ

তারা বলছে জাতীয় পরিচয়ে “বাঙালি” শব্দ বাদ দিয়ে “বাংলাদেশি” ব্যবহার করতে হবে। এটি সরাসরি বিএনপি-ঘরানার রাজনৈতিক ভাষা। নারীর অধিকার কোথায়?

৭. সংসদে ৬০০ আসন, উচ্চকক্ষ-নিম্নকক্ষ—কিন্তু নারী কোথায়?

সংসদের আকার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু নারী প্রতিনিধিত্বের জন্য কোনো বিশেষ সুযোগের উল্লেখ নেই।

৮. গণভোট দিয়ে আইন পাস করার প্রস্তাব

তারা বলছে, এসব সংস্কার গণভোটের মাধ্যমে পাস করাতে হবে—সংসদ ছাড়াই।

৯. রিপোর্ট জুড়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার

বারবার শেখ হাসিনাকে দোষারোপ করা হয়েছে। অথচ তার সময়েই নারীরা গার্মেন্টসে কাজ পেয়েছে, প্রশাসনে এসেছে, সেনাবাহিনীতেও যোগ দিয়েছে।

১০. RPO আইনে ৩৩% নারী কোটা কমিশনে স্বীকার করা হয়নি

RPO আইনে শেখ হাসিনা বাধ্যতামূলক করেছিলেন ৩৩% নারী নেতৃত্ব। কিন্তু রিপোর্টে সেটি স্বীকার না করে উল্টো তাঁকেই দোষারোপ করা হয়েছে।

উপসংহার

এই ৩১৮ পৃষ্ঠার রিপোর্ট নারী অধিকারের নয়। এটি একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনার দলিল। নারীকে সামনে রেখে করা হয়েছে ক্ষমতা কাঠামো পরিবর্তনের নীলনকশা। নারীর কথা বলেছে মুখে, কিন্তু কাজ করেছে শুধুই পুরনো সরকারকে গালিগালাজ, নির্বাচন ঠেকানো, এবং বর্তমান সরকারকে চিরস্থায়ী করার প্রস্তাব। এটা নারী অধিকার নয়—এটা নারী-ঢাল-দিয়ে-রাষ্ট্র-দখল কমিশন।

সারাহ্-এর ফেসবুক থেকে

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জয় বাংলার উচ্ছ্বাস খুঁজি

১৫ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক ঘটনাবহুল দিন

নতুন আতঙ্ক জিকা ভাইরাস : করণীয় কী?

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভূতের আক্রমণ

মিথ্যা তথ্যের জালে নতুন প্রজন্ম!

জানুয়ারি থেকে জুন, প্রতিদিন ১১ খুন

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি: জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

১৩ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

১২ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা, রণনীতি ও কৌশল নির্ধারণে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডার্স সম্মেলন

১০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গতিধারা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

১০

৯ জুলাই ১৯৭১: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রতিরোধের গৌরব

১১

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা: আনোয়ারার রক্তাক্ত ৭ জুলাই ১৯৭১

১২

সরিষাবাড়ি ও পাতপাড়া গ্রাম গণহত্যা: জামালপুরের বীরত্ব ও বেদনা

১৩

বান্দাইখাড়া গণহত্যা: নওগাঁর আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা

১৪

বরুণা বাজার গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর নির্মম অধ্যায়

১৫

চেঁচুড়ি গণহত্যা: জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এর নির্মম ঘটনাবলি

১৬

খলশি গণহত্যা: জুলাই-নভেম্বর ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

১৭

কালীনগর গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

১৮

৭ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সিদ্ধান্তমুখর দিন

১৯

মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সদিচ্ছার অভাব

২০