ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

কোরবান আলী

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৫:৩৪ পিএম
কোরবান আলী
কোরবান আলী

কোরবান আলী ছিলেন একজন গুণী মানুষ। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। ফরিদপুর জেলা বোর্ডের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করেছেন। অর্থবিত্তের প্রতি লোভ ছিল না। সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সর্বশেষ কর্মস্থল ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা থেকে তিনি একাত্তরের ১৫ মে নিখোঁজ হন। পরিবারের লোকেরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পাকিস্তানি হানাদার সেনারা তাঁকে হত্যা করেছে। তবে স্বজনেরা লাশ পাননি।

কোরবান আলীর জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দুর্গাপুরে। তাঁর বাবা মহিউদ্দীন মিঞা কৃষিজীবী, মা এসমা খাতুন। তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে কোরবান আলী ছিলেন সবার বড়। শৈশব থেকেই খেলাধুলা ও অভিনয়ের অনুরাগী ছিলেন। নবাবগঞ্জ এইচ এম ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৪৭ সালে তিনি মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫২ সালে তৎকালীন রাজশাহী মেডিকেল স্কুল থেকে এলএমএফ পাস করে ফরিদপুর জেলা বোর্ডের স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি ফরিদপুর, সাজাইল, ভাঙ্গা ও বোয়ালমারীর চ্যারিটেবল ডিসপেনসারিতে চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ এবং আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থে কোরবান আলীর সংক্ষিপ্ত জীবনী রয়েছে।

চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা ও খেলাধুলা করতেন। মঞ্চনাটকে অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত

হয়েছেন। এ ছাড়া দাবা, ফুটবল ও ভলিবলে পারদর্শী ছিলেন। ফরিদপুর এলাকায় রেডক্রস আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। নিজ গ্রামে ও কর্মস্থলে পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিতেন। যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও।

শহীদ কোরবান আলী বাংলাদেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বুঝতে পেরে গণহত্যা শুরুর আগেই একাত্তরের ২০ মার্চ তিনি স্ত্রী সালেহা বেগম ও চার ছেলেকে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেন। স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় থাকায় স্থানীয় পাকিস্তানপন্থীরা কোরবান আলীর ওপর নাখোশ ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বোয়ালমারীতে থাকা কোরবান আলীর পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি গ্রামে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ফরিদপুরে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোরবান আলীর কোনো খোঁজ পাননি। তাঁরা ফরিদপুরে তাঁর অফিসেও যোগাযোগ করেন। অবশেষে অফিস থেকে তাঁর স্ত্রীর কাছে একাত্তরের ১০ জুন চিঠি দিয়ে জানানো হয়, কোরবান আলী ১২ মে ছুটি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে গেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা জুলাই মাসের শেষ দিকে ফরিদপুরে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পাকিস্তানি হানাদার সেনারা কোরবান আলীকে হত্যা করেছে।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর কাছে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও দুই হাজার টাকার অনুদান পাঠিয়েছিলেন। তাঁর চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আবু রাকিব চিকিৎসক, দ্বিতীয় ছেলে আবু হাসিব চাঁপাইনবাবগঞ্জের আইনজীবী। অন্য দুই ছেলে আবু নাসিব ও আবু নাকিব ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁরা মারা গেছেন। কোরবান আলী যেন শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পান, এটাই পরিবারের প্রত্যাশা।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথরাইল-নলশোদা গণহত্যা (দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল)

৩০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর সফল গেরিলা অভিযান

গঙ্গাচড়ার সহিংসতা / রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও সমাজের নীরবতা

২৯ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ কার্যক্রম তীব্রতর

সংবিধানের সঙ

২৭ জুলাই ১৯৭১: বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী আক্রমণ

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)

২৪ জুলাই ১৯৭১: ভেনিজুয়েলা ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

১০

মানুষই মানুষের অন্তিম আশ্রয়

১১

২৩ জুলাই ১৯৭১: বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত

১২

২২ জুলাই ১৯৭১: টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ

১৩

ভাড়ায় চাপাতি ও মোটরসাইকেল: রাজধানীর অপরাধ জগতের ভয়াবহ নতুন রূপ

১৪

রাজনীতির উনমানুষরাই প্রলাপ ডাকে বেশি

১৫

২১ জুলাই ১৯৭১: ঠাকুরগাঁওয়ে গেরিলা অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের

১৬

মবতন্ত্রের জয়

১৭

ডিজিটাল দাসত্ব: মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

১৮

২০ জুলাই, ১৯৭১: বাংলাদেশে কুচক্রী আগ্রাসন

১৯

২০ জুলাই ১৯৭১: বিলমাড়িয়া হাটে গণহত্যা পাকিস্তানি সেনাদের

২০