ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

শান্তিময় খাস্তগীর

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৫:৩১ পিএম
শান্তিময় খাস্তগীর
শান্তিময় খাস্তগীর

বোয়ালখালী উপজেলার স্যার আশুতোষ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শান্তিময় খাস্তগীর ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। দেশের প্রতি এই চিরকুমার শিক্ষকের ছিল গভীর ভালোবাসা। ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেন দেশপ্রেমে। কলেজের ছাত্রাবাসে আশ্রয় দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এ কারণে রাজাকাররা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

একাত্তরের ৩১ জুলাই সকালে অধ্যক্ষ শান্তিময় খাস্তগীর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় তাঁর কলেজসংলগ্ন বাসভবনেই ছিলেন। একদল রাজাকার বাড়িতে ঢুকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। ঘাতকেরা এ সময় তাঁর পাচক নারায়ণ বসুকেও হত্যা করে। তৎকালীন বিভূতিভূষণ উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী বিধান বিশ্বাস ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, কানুনগোপাড়া কলেজ তাঁর বাড়ির পাশেই। সেদিন সকালে গুলির শব্দ শুনে তাঁরা কলেজের আবাসিক ভবনে যান। তাঁরা শান্তিময় খাস্তগীরের মৃতদেহ তাঁর থাকার ঘরের খাটের ওপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পাশের ঘরে পড়ে ছিল নারায়ণ বসুর লাশ।

আতঙ্কময় পরিস্থিতির কারণে তাঁদের লাশ দাহ না করে স্থানীয় কালীবাড়ি পুকুরপাড়ে সমাধিস্থ করা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে প্রথম আলোতে বিজ্ঞাপন ছাপা হলে স্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও প্রাবন্ধিক হামীম রায়হান শহীদ শান্তিময় খাস্তগীরের ছবি ও বিস্তারিত তথ্য পাঠান। সেই সূত্রে অনুসন্ধান করা হয়। শান্তিময় খাস্তগীরের জন্ম ১৯১৬ সালে ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়ার সূচক্রদণ্ডী গ্রামে। বাবা সারাদাচরণ খান্তগীর ছিলেন আইনজ্ঞ ও বিদ্যানুরাগী, মা শশাংকমালা দেবী। তিনি চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। শান্তিময় খাস্তগীর ১৯৩২ সালে পটিয়া ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয় (বর্তমান পটিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়) থেকে ম্যাট্রিকুলেশনে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। অন্য কোনো পেশার চেষ্টা না করে শিক্ষকতায় যুক্ত হন তিনি।

শান্তিময় খাস্তগীর সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও রাজনীতি-সচেতন ছিলেন। পরিবারের সবাই একে একে কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলেও তিনি যাননি। ছাত্রদের তিনি সব সময় দেশ ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি গরিব ও অভাবগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের বিনা বেতনে পড়াতেন এবং আর্থিক সাহায্য করতেন। কলেজের ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী ও কর্মচারীরাই ছিল তাঁর আপনজন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশে গণহত্যা শুরু করলে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা শহর ছেড়ে পটিয়া-কানুনগোপাড়ার দিকে চলে আসেন। শান্তিময় খাস্তগীর এমন অনেক স্বাধীনতাসংগ্রামী নেতা-কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কলেজ হোস্টেলে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা করতেন। এসব কারণে স্থানীয় রাজাকাররা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।

শহীদ শান্তিময় খাস্তগীরের সমাধিস্থলে স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় তাঁর প্রাক্তন ছাত্র ও সুধীদের নিয়ে শহীদ শান্তিময় খাস্তগীর স্মৃতি পরিষদ নামে একটি সংগঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবছর তাঁর শহীদ হওয়ার দিনে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্মরণানুষ্ঠান করে থাকে।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৯ জুলাই ১৯৭১: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রতিরোধের গৌরব

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা: আনোয়ারার রক্তাক্ত ৭ জুলাই ১৯৭১

সরিষাবাড়ি ও পাতপাড়া গ্রাম গণহত্যা: জামালপুরের বীরত্ব ও বেদনা

বান্দাইখাড়া গণহত্যা: নওগাঁর আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা

বরুণা বাজার গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর নির্মম অধ্যায়

চেঁচুড়ি গণহত্যা: জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এর নির্মম ঘটনাবলি

খলশি গণহত্যা: জুলাই-নভেম্বর ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

কালীনগর গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

৭ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সিদ্ধান্তমুখর দিন

মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সদিচ্ছার অভাব

১০

মব সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ দেশ

১১

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

১২

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম মব সন্ত্রাস

১৩

৫ জুলাই, ১৯৭১: মুজিবনগরে গণপ্রতিনিধিদের ঐতিহাসিক বৈঠক

১৪

২ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

১৫

মিট্টিকুলাস পুলিশ হত্যা

১৬

১ জুলাই ১৯৭১: ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমাধান প্রত্যাখ্যান

১৭

ধামুসা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর)

১৮

৩০ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট

১৯

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা দেশ কখনোই সভ্য হতে পারে না

২০