ঢাকা সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ
আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাদের দোসর খুনি আলবদরের হাত থেকে রেহাই পাননি শিক্ষক আবুল বাশার মহিউদ্দিন আহম্মদ। বাজার করতে যাওয়ার সময় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কিশোরগঞ্জের এই খ্যাতনামা শিক্ষক ও ভাষাসৈনিককে।

শহীদ এ বি মহিউদ্দিন আহম্মদের জন্ম ১৯২৮ সালে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পানান গ্রামে। বাবা শেখ কমধর, মা কলিমুন নেছা। কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কিশোরগঞ্জের অন্যতম ভাষাসৈনিক ছিলেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়েছিলেন। গ্রামবাসীর অনুরোধে তিনি গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন। কিছুদিন পর অবশ্য ইস্তফা দিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্নে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মহিউদ্দিন আহম্মদ কিশোরগঞ্জ এলাকার কোদালিয়া, নানশ্রী, কাদিরপুরসহ বিভিন্ন স্কুলে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তাড়াইল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বাংলা একাডেমির রশীদ হায়দার সম্পাদিত স্মৃতি-১৯৭১ গ্রন্থের পুনর্বিন্যাসকৃত তৃতীয় খণ্ডে মহিউদ্দিন আহম্মদকে নিয়ে তাঁর ছেলে ওয়াহিদুজ্জামানের একটি স্মৃতিকথা রয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকায় জেলায় রাজাকার আলবদরদের হাতে শহীদদের তালিকায় প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহম্মদের নাম রয়েছে।

স্বাধীনচেতা এ বি মহিউদ্দিন আহম্মদ তাঁর ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন। এ কারণে একাত্তরের জুনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে স্কুল থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর বড় ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান জানান, হানাদার সেনারা তাঁর বাবাকে দুই দিন বন্দী করে রেখে অত্যাচার করে ছেড়ে দিলেও তাদের দোসর আলবদরদের হাত থেকে তিনি থেকে রক্ষা পাননি। একাত্তরের ১০ নভেম্বর তাঁর বাবা গিয়েছিলেন শহরের কাছারিবাজারে কাঁচাবাজার করার জন্য। তখন ছিল রমজান মাস, তিনি রোজাও রেখেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল প্রতিবেশী এক শিশু। কিশোরগঞ্জ শহরের বটতলা এলাকায় আসতেই দুই আলবদর তাঁকে ধরে মারধর করে রিকশার পাদানিতে বসিয়ে রেলস্টেশনসংলগ্ন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শিশুটি দৌড়ে বাড়িতে খবর দেয়।

ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, স্কুলে ছিলাম। হেড স্যার আমাকে ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে বললেন, তোমার ছুটি, বাসায় চলে যাও। ছুটি পেয়ে আমি মহাখুশি। বাসায় ফিরে জানতে পারি বাবাকে আলবদররা ধরে নিয়ে গেছে। সবাই বলছিল বাবা ফিরে আসবে। কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে আমরা জানতে পারি, রেলস্টেশনসংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্পে ওই দিন রাতে বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বাবার লাশ আমরা পাইনি।

ওয়াহিদুজ্জামান জানান, তাঁর মা জমিলা খাতুন অনেক কষ্ট করে তাঁদের চার ভাই ও পাঁচ বোনকে বড় করেছেন। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বাবাকে হত্যার মামলা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে তাঁর মা মারা গেছেন। তাঁর আফসোস, স্বামী হত্যার বিচার তিনি দেখে যেতে পারেননি। পরিবারের পক্ষ থাকে তাঁরা চান মামলাটির দ্রুত রায় হোক। পাশাপাশি শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাঁর বাবাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২ জুন ১৯৭১: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন

ধর্মান্ধতার শিকার প্রান্তিক নারীজীবনের কথাশিল্পী বানু মুশতাক

আইএমএফের পরামর্শ / ডলারের দাম বাজারীকরণের বিপদ

সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা

ভ্রমণপ্রেমী গভর্নরের নয় মাসে ৬৫ দিন বিদেশ সফর

বাজেটে স্বস্তি নেই মধ্যবিত্তের

কোদালিয়া গণহত্যা / নগরকান্দার রক্তঝরা ইতিহাস

১ জুন ১৯৭১: নগরকান্দা গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি

মানুষ কার কাছে আশ্রয় চাইবে

আজহারুল ইসলামের রায়: বিচারের মানদণ্ড নাকি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন?

১০

অভয়নগরের ভয়, আমাদের পিছু ছাড়ছে না

১১

চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি ইজারাদারি: আয় প্রবৃদ্ধির বাস্তবতা বনাম হুমকি

১২

৩১ মে ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিকাল

১৩

দ্বন্দ্বমুখর রাজনীতির সংকট ও ‘থ্রি এম’ সমাধান

১৪

২৯ মে, ১৯৭১: বরগুনার গণহত্যা, আন্তর্জাতিক মহলে কূটনৈতিক তৎপরতা

১৫

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

১৬

২৮ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ দিন

১৭

বাগবাটি গণহত্যা: সিরাজগঞ্জের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস

১৮

২৭ মে ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের স্মরণীয় দিন

১৯

গণ-অভ্যুত্থানগুলোর পরিণতি হতাশাজনক

২০