ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা
শহীদ বুদ্ধিজীবী

নওশের আলী

প্রিয়ভূমি ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ০৮:১৩ পিএম
নওশের আলী
নওশের আলী

ঈশ্বরদীর নওশের আলী পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৯ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সেখানে তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতেন। এ কারণে রাজাকাররা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

পাকিস্তানি হানাদার সেনারা তখন পাবনায় গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। প্রাণ বাঁচাতে নওশের আলী রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় তাঁর বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখান থেকে রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি। তাঁর লাশও পায়নি পরিবার।

নওশের আলীর বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আড়মবাড়িয়া গ্রামে। বাবা বাহাউদ্দিন শেখ ও মা নূরজাহান শেখের সংসারে ১৯৩০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। ছয় ভাই, এক বোনের মধ্যে নওশের আলী ছিলেন তৃতীয়। স্কুলজীবন কাটিয়েছেন রাজশাহীতে। ১৯৫৬ সালে তিনি রাজশাহী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। সেখান থেকে ১৯৪৮ সালে আইএসসি পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে এমবিবিএস পাস করে ফিরে আসেন ঈশ্বরদীতে।

শহীদ নওশের আলী ঈশ্বরদীর আলহাজ টেক্সটাইল মিল, নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করেন। সর্বশেষ তিনি পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ) মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন ৯ নম্বর সেক্টরে। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতেন। মাঝে কিছুদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীতে ফেরেন। এ সময়ই পাকিস্তানি হানাদাররা গ্রামে গ্রামে হামলা করতে থাকে।

১৫ এপ্রিল স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বোনের বাড়ি থেকে নওশের আলীকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার সেনারা। তাঁকে ছাড়া আরও তিনজনকে তারা নিয়ে যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ক্যাম্পে। এর পর থেকেই আর খোঁজ মেলেনি নওশের আলীর। আগামী প্রকাশনীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে এবং সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক জীবনকোষ গ্রন্থে শহীদ নওশের আলীর সচিত্র জীবনী রয়েছে।

নওশের আলীর তিন ছেলে ও তিন মেয়ে, সবাই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। তাঁর স্ত্রী শামসুন্নাহার সন্তানদের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সম্প্রতি নওশের আলীর তৃতীয় মেয়ে সাবিনা ইকবাল দেশে এসেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, তাঁর বাবাকে যখন ফুফুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র চার বছর। তাঁর সামনেই বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আমার বাবা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। কিন্তু দেশে আমার বাবার কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই। কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে সরকারি তালিকায় বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে এবং বাবার নামে একটি সড়ক, স্কুল, হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি জানাই।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাথরাইল-নলশোদা গণহত্যা (দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল)

৩০ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর সফল গেরিলা অভিযান

গঙ্গাচড়ার সহিংসতা / রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব ও সমাজের নীরবতা

২৯ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ কার্যক্রম তীব্রতর

সংবিধানের সঙ

২৭ জুলাই ১৯৭১: বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাহসী আক্রমণ

২৬ জুলাই ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন

রাধুটিলা গণহত্যা (বিয়ানীবাজার, সিলেট)

২৪ জুলাই ১৯৭১: ভেনিজুয়েলা ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ

পাতারচর গণহত্যা (মুলাদী, বরিশাল)

১০

মানুষই মানুষের অন্তিম আশ্রয়

১১

২৩ জুলাই ১৯৭১: বিশ্ব শক্তি বাংলাদেশ সংকট নিয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত

১২

২২ জুলাই ১৯৭১: টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণ

১৩

ভাড়ায় চাপাতি ও মোটরসাইকেল: রাজধানীর অপরাধ জগতের ভয়াবহ নতুন রূপ

১৪

রাজনীতির উনমানুষরাই প্রলাপ ডাকে বেশি

১৫

২১ জুলাই ১৯৭১: ঠাকুরগাঁওয়ে গেরিলা অভিযান মুক্তিযোদ্ধাদের

১৬

মবতন্ত্রের জয়

১৭

ডিজিটাল দাসত্ব: মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

১৮

২০ জুলাই, ১৯৭১: বাংলাদেশে কুচক্রী আগ্রাসন

১৯

২০ জুলাই ১৯৭১: বিলমাড়িয়া হাটে গণহত্যা পাকিস্তানি সেনাদের

২০