ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় তাহমিনার পরিবার

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম
তাহমিনা আক্তার
তাহমিনা আক্তার

নদীভাঙন ও চরম দারিদ্র্যের মাঝেও হার মানেনি তাহমিনা আক্তারের স্বপ্ন। নোয়াখালীর উপকূলীয় ও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রত্যন্ত জোডখালী গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে সে এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। কিন্তু এই সাফল্যের মধ্যেই এক নতুন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাহমিনার মা-বাবা। ভর্তি ও ঢাকায় লেখাপড়ার খরচ কীভাবে জোগাবেন, সেই প্রশ্ন এখন তাদের কাছে বড় এক বোঝা।

তাহমিনার বাড়ি হাতিয়ার হরণী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের জোডখালী গ্রামে। বাবা কামাল উদ্দিন একজন দিনমজুর, স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। মা রাবেয়া খাতুন গৃহিণী। সংসারে রয়েছে আরও চার ভাইবোন।

জানা যায়, দরিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই বেড়া উঠা তাহমিনা আক্তারের। হাতিয়া জনকল্যাণ শিক্ষা ট্রাস্ট হাইস্কুল থেকে ৪.৮৩ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও মোহাম্মদ আলী কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেছেন। অন্যদের পুরাতন বই সংগ্রহ করে শেষ করেছেন পড়ালেখা। কোচিংয়ের সামর্থ্য না থাকলেও প্রবল আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়ে নিজেকে প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। কোনো কোচিং ছাড়াই তাহমিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তার পরিবার ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

তাহমিনা আক্তার বলেন, পুরাতন বই সংগ্রহ করে আমি পড়াশোনা করেছি। টাকার অভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পাশাপাশি গুচ্ছে এখনো রেজাল্ট দেয়নি। আমি জানি না ঢাকায় গিয়ে কিভাবে পড়াশোনা করব, তা এখনো ভাবতে পারছি না। কিন্তু আমি হাল ছাড়তে চাই না। জীবনে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখি।

তাহমিনার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, মেয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। সে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু এখন তো ভর্তি আর পড়াশোনার খরচ জোগানোই বড় চিন্তা।

স্থানীয় অনেকেই তাহমিনার সাফল্যে আনন্দিত অন্যদিকে আনন্দিত তাহমিনার শিক্ষকরাও। মোহাম্মদ আলী কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আজমির হোসেন বলেন, তাহমিনা আমাদের কলেজের গর্ব। সে শুধু মেধাবীই নয়, অত্যন্ত বিনয়ী ও পরিশ্রমী একজন শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের হলেও, তার পরিবারের জন্য তা এখন এক নতুন দুশ্চিন্তার নাম। যদি উপযুক্ত সহায়তা পায় এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তাহমিনা ভবিষ্যতে দেশ ও সমাজের জন্য এক মূল্যবান সম্পদে পরিণত হবে।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৯ জুলাই ১৯৭১: আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও প্রতিরোধের গৌরব

সুরমা পুকুরপাড় গণহত্যা: আনোয়ারার রক্তাক্ত ৭ জুলাই ১৯৭১

সরিষাবাড়ি ও পাতপাড়া গ্রাম গণহত্যা: জামালপুরের বীরত্ব ও বেদনা

বান্দাইখাড়া গণহত্যা: নওগাঁর আত্রাইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা

বরুণা বাজার গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর নির্মম অধ্যায়

চেঁচুড়ি গণহত্যা: জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এর নির্মম ঘটনাবলি

খলশি গণহত্যা: জুলাই-নভেম্বর ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

কালীনগর গণহত্যা: জুলাই ১৯৭১-এর এক নির্মম অধ্যায়

৭ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সিদ্ধান্তমুখর দিন

মব ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সদিচ্ছার অভাব

১০

মব সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ দেশ

১১

নারীশিক্ষা বনাম বাল্যবিয়ে

১২

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম মব সন্ত্রাস

১৩

৫ জুলাই, ১৯৭১: মুজিবনগরে গণপ্রতিনিধিদের ঐতিহাসিক বৈঠক

১৪

২ জুলাই ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

১৫

মিট্টিকুলাস পুলিশ হত্যা

১৬

১ জুলাই ১৯৭১: ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমাধান প্রত্যাখ্যান

১৭

ধামুসা গণহত্যা (কালকিনি, মাদারীপুর)

১৮

৩০ জুন ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপট

১৯

সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা দেশ কখনোই সভ্য হতে পারে না

২০