

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৫ এপ্রিল ১৯৭১ ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা এই সময় মুক্তিযুদ্ধকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ১০ জন সিনেটর একটি যৌথ বিবৃতি দেন। তারা উল্লেখ করেন, পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলার সংকট মোকাবিলায় ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যর্থ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও সেখানে কাজ করতে দিচ্ছে না। সিনেটররা প্রস্তাব করেন, পশ্চিমা দেশ এবং জাতিসংঘের উচিত পাকিস্তানে সমস্ত বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করা।
কূটনৈতিক পদক্ষেপ
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়া আরশাদ হোসেন সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত নেতাদের সঙ্গে বার্তা বিনিময়।
দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতা
পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে তিনটি প্রধান সামরিক সেক্টর এবং ১০টি সাব-সেক্টরে ভাগ করে তাদের দমননীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়।
বরিশাল আক্রমণ
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বরিশালে টানা বোমা বর্ষণ করে এবং হেলিকপ্টার থেকে সেনা নামায়। বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ভেঙে বরিশাল শহর দখল করে।
গোপালগঞ্জ দখল
গোপালগঞ্জ শহরেও পাকিস্তানি সেনারা প্রবেশ করে এবং স্থানীয় খেলার মাঠ, ঈদগাহ ও কলেজে ঘাঁটি স্থাপন করে।
নওগাঁ হত্যাকাণ্ড
নওগাঁর বিভিন্ন গ্রামে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের হত্যা করে। কুমরিয়া, মোহনপুর এবং জাফরাবাজে অসংখ্য বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।
চট্টগ্রাম ও সিলেট সংঘর্ষ
চট্টগ্রামের করেরহাট এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ
বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যান। পাবনা, দিনাজপুর, এবং চট্টগ্রামে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। প্রতিরোধ সত্ত্বেও কিছু স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন।
সার্বিক চিত্র
২৫ এপ্রিলের ঘটনাগুলো মুক্তিযুদ্ধের এক জটিল অধ্যায়কে চিত্রিত করে। দেশীয় প্রতিরোধ ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে থাকে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর এক, সাত ও নয়; দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ, ২৬ এপ্রিল ১৯৭১
মন্তব্য করুন