ad

১০ টাকা কেজি আলু, চাষিদের হতাশা চরমে

প্রিয়ভূমি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
১০ টাকা কেজি আলু, চাষিদের হতাশা চরমে

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় এবারও আলু চাষের ব্যাপকতা বেড়েছে। কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই মৌসুমে প্রায় ৭০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর উৎপাদনও ছিল রেকর্ড পরিমাণ। তবে বাজারে ক্রেতার অভাবে আলুর দাম পড়ে গেছে অনেক নিচে।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, হিমাগারে জায়গা না পাওয়ার কারণে তারা তাদের পণ্য সংরক্ষণ করতে পারছেন না। বাড়িতে রেখে দেওয়ারও উপায় নেই, কারণ আলু পচনশীল। বাধ্য হয়ে বাজারে নিয়ে গেলেও মিলছে না ন্যায্য দাম। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।

আক্কেলপুরের বাজারে বিভিন্ন জাতের আলুর দাম নজরে পড়ার মতো কম। লাল আলু প্রতি কেজি ১৫ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে লাল আলুর দাম প্রতি মণ মাত্র ৪০০ টাকা, আর ডায়মন্ড ও গ্রানুলা জাতের সাদা আলুর দাম ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে।

আওয়ালগাড়ি গ্রামের চাষি জাইদুল ইসলাম বলেন, "গত বছর আলুর ভালো দাম পাওয়ার কারণে এ বছর চাষিরা বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। কিন্তু এবার উৎপাদন খরচই উঠছে না। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও, বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫-১৬ হাজার টাকায়।"

একই গ্রামের চাষি মো. সাজাহান আলী জানান, "বীজ আলুর কেজি ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। আর আজ সেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ টাকায়। এই দাম চাষিদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ।"

বদলগাছী উপজেলার পাপ্পু মণ্ডল বলেন, "এই দামে আলু বিক্রি করলে পরিবার চালানোই দায় হয়ে পড়বে। ২-৩ শ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করছি। এই দামে কোনোভাবেই চাষ টিকে থাকতে পারবে না।"

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই মৌসুমে আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৭০০ হেক্টর বেশি। কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলছেন, “উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম কমেছে। চাষিদের উচিত বিকল্প ফসল চাষের দিকে নজর দেওয়া।”

জেলা কৃষিবিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, “আলু পচনশীল ফসল হওয়ায় সংরক্ষণ বড় চ্যালেঞ্জ। আক্কেলপুরে তিনটি বেসরকারি হিমাগার রয়েছে, তবে সেগুলোর ধারণক্ষমতা সীমিত। চাষিদের উন্নত জাতের আলু বা বিকল্প ফসল চাষের পরিকল্পনা করা উচিত।”

কৃষকদের অভিযোগ, হিমাগারে সিন্ডিকেটের কারণে স্লিপ না পাওয়ায় তারা আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না। অন্যদিকে, বাজারে ক্রেতার অভাবে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে অত্যন্ত কম দামে। কৃষিবিদরা মনে করেন, চাষিদের বিকল্প ফসল চাষের দিকে উৎসাহিত করা এবং উন্নত জাতের আলু উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, সরকারের উচিত সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

চাষিদের দাবি, তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে আলু চাষ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ন্যানো-বালাইনাশক: ফসল ও পরিবেশ সুরক্ষায় নব-বিপ্লব

পটুয়াখালী গণহত্যা দিবস আজ

কাশ্মিরে দুপক্ষের মধ্যে আবারও গোলাগুলি

সিন্ধুতে হয় পানি, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে: বিলাওয়াল ভুট্টো

পেহেলগামে হামলা : আসামে একদিনে গ্রেপ্তার ৯

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা: ইতিহাস ও ধর্মের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ

ভারত-পাকিস্তান নিজেরাই চলমান সংকট সমাধান করবে: ট্রাম্প

ওমানে আজ তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসছে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে পাকিস্তানের সব দল

রাবির ‘এ’ ইউনিটে প্রথম হয়েছেন বোরহান ও সাদিয়া

১০

ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি এখন জাপানের চেয়েও বড়

১১

প্রতিবাদের মুখে চলচ্চিত্রে অনুদানের নতুন নিয়ম স্থগিত

১২

পুরুষের জন্য এল নতুন জন্মনিরোধক, একবার ব্যবহারে নিশ্চিন্ত দুই বছর

১৩

পাকিস্তানি অভিনেতার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না ভারতে

১৪

১৯৮৫ সালের মামলায় ইয়ামি গৌতম

১৫

জীবনানন্দ দাশ বিষয়ক কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

১৬

কাশ্মির হামলায় সরব হলেন সোনাক্ষী সিনহা

১৭

বাংলা ব্যাকরণের ২০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

১৮

কেমন ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের সম্পর্ক

১৯

২৬ এপ্রিল ১৯৭১: পাকিস্তানে অর্থনৈতিক অবরোধের আহ্বান

২০