ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২
মুক্ত মনমুক্ত চিন্তামুক্তি গাথা

‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

সম্মোহন ঋক
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ০২:২৯ পিএম
‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’

১৯৭১ থেকে আজ পর্যন্ত: একটি অপরাধী রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা যে গণহত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা ছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। কিন্তু আজ, ৫৩ বছর পরও, সেই গণহত্যার পাহারাদাররা ক্ষমতার গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ‘ইন্টেরিম সরকার’ নামে পরিচিত বর্তমান শাসকগোষ্ঠী, যারা একাত্তরের ঘাতকদের উত্তরসূরি, তারা আজও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর।


১. ১৯৭১: জামায়াত-শিবিরের নৃশংস ভূমিকা

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী, আল-বদর, আল-শামস ও অন্যান্য ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নেয়। তাদের অপরাধগুলো ছিল:

  • বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড: ডিসেম্বরের ১৪-১৬ তারিখে আল-বদর বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান—শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।

  • গণধর্ষণ ও গণকবর: রাজাকার বাহিনী নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়, পুরুষদের গণহারে গুলি করে হত্যা করে।

  • ধর্মীয় সংখ্যালঘু নিধন: হিন্দু সম্প্রদায়কে বিশেষ টার্গেট করে হত্যা, জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও সম্পদ লুট করা হয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও গবেষণায় প্রমাণ:

  • সিমন ড্রিং (দ্য সানডে টাইমস) তাঁর রিপোর্টে লিখেছেন, "জামায়াত ও শিবিরের সদস্যরা স্থানীয় লোকদের চিহ্নিত করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দিয়েছে।"

  • ব্লাড টেলিগ্রাম (আমেরিকান কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড)-এ উল্লেখ করা হয়েছে, "ধর্মীয় মৌলবাদীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে।"


২. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আজহারের খালাস: বিচারের মঞ্চে ফার্সি

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) গঠন করে। এই ট্রাইব্যুনালে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে:

  • আজহারুল ইসলাম (জামায়াত নেতা), যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিলেন, তিনি ২০২৪ সালে হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন।

  • মুক্তিযোদ্ধা নিধন: গোপালগঞ্জ, মাগুরা, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও হয়রানির ঘটনা বেড়েছে।

  • যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন: অনেক জামায়াত নেতা এখন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন।

প্রশ্ন:

“যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আজ কেন গণহত্যার অপরাধীদের মুক্ত করছে?”


৩. মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস: ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপরাজেয় বাংলা’-তে হামলা।

  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’ ভাস্কর্য ভাঙচুর

  • খুলনার ‘শিখা চিরন্তন’-এ হামলা।

  • মুক্তিযুদ্ধের বই ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন: মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করে জামায়াতের ভূমিকা হালকা করার চেষ্টা।

উদ্দেশ্য

“মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা।”


৪. ইসলামী রাজনীতির ছদ্মবেশে ফ্যাসিবাদ

জামায়াত ও তাদের মিত্ররা আজ ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ এর নামে যা চায়, তা হলো:

  • মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা।

  • ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়া।

  • মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীলতা ও নারীর অধিকারকে দমন করা।

বর্তমান সরকারের ভূমিকা:

  • জামায়াতকে প্রশ্রয় দেওয়া, যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ।

  • মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও প্রগতিশীল ব্যক্তিদের উপর নজরদারি ও হত্যা।

  • মিডিয়া সেন্সরশিপ: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কথা বললে হয়রানি।


৫. উপসংহার: প্রতিরোধের ডাক

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। কিন্তু আজ "ইন্টেরিম সরকার" নামক একটি গোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চায়। তাদের লক্ষ্য: ✅ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কবর দেওয়া।যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা।প্রগতিশীল শক্তিকে নির্মূল করা।

আমাদের করণীয়:

  • ইতিহাস বিকৃতি রুখে দাঁড়ানো।

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করা।

  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা।

“গণহত্যার পাহারাদারদের হাতে বাংলাদেশ ছাড়ব না!”

সূত্র:

  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় (২০১৩-২০১৬)

  • দ্য সানডে টাইমস (১৯৭১), ব্লাড টেলিগ্রাম (ডিসেম্বর ১৯৭১)

  • মানবাধিকার সংস্থা “আইন ও সালিশ কেন্দ্র”-এর রিপোর্ট (২০২৩-২০২৪)

  • মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা: “একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ” (ড. মুনতাসীর মামুন)

অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৪ অক্টোবর ১৯৭১: বিনা শর্তে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবি মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়

১ অক্টোবর ১৯৭১: রায়পুরের রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেরিলাদের আক্রমণ

হাসনাবাদ গণহত্যা (নবাবগঞ্জ, ঢাকা)

কাটেঙ্গা গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ‘পূর্ব বাংলার সমস্যার সমাধান শেখ মুজিবের সঙ্গেই করতে হবে’

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: “বিদেশি চাপে আমাদের বহু চেষ্টা নস্যাত হয়ে গেছে”

২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: জাতিসংঘে বাংলাদেশ নিয়ে নাটকীয়তা

সাদকপুর গণহত্যা (বুড়িচং, কুমিল্লা)

ফুলদহেরপাড়া গণহত্যা (সরিষাবাড়ী, জামালপুর)

আন্দুলিয়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

১০

২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বিজয়ই আমাদের একমাত্র ও চূড়ান্ত গন্তব্য

১১

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতারণা: জনগণের অট্টহাসি ও অবিশ্বাসের প্রতিফলন

১২

২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: চালনা বন্দরে মার্কিন জাহাজ মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস

১৩

বীর উত্তম আবদুস সালেক চৌধুরী: আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল যাঁর সাহস

১৪

রামনগর গণহত্যা (রায়পুরা, নরসিংদী)

১৫

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ভিয়েতনামের সমর্থন

১৬

মামুদপুর গণহত্যা (গোপালপুর, টাঙ্গাইল)

১৭

ত্রিমোহনী গণহত্যা ও বধ্যভূমি, নেত্রকোনা

১৮

২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১: ঢাকায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক

১৯

চিংড়া গণহত্যা (ডুমুরিয়া, খুলনা)

২০