১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঘটনাবহুল দিন হিসেবে চিহ্নিত। এই দিনটি শুধুমাত্র পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর পৈশাচিক গণহত্যার স্মৃতি বহন করে না, বরং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি জাগ্রত হওয়া সমর্থন এবং মুক্তিবাহিনীর সাহসী প্রতিরোধের কাহিনীও উন্মোচন করে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের অত্যাচারের মুখে বাঙালির রক্তাক্ত সংগ্রামের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এই দিনটিকে বিশেষ করে তোলে। এদিনের ঘটনাবলীতে গণহত্যার কালো অধ্যায়ের সাথে মিলেশেবার আলোকসমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অক্লান্ত লড়াইয়ের বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে এই দিনের ঘটনাসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হলো, যা ঐতিহাসিক দলিলপত্র এবং সংবাদপত্রের উল্লেখযোগ্য রিপোর্টের ভিত্তিতে সংকলিত।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি জাগ্রত সমর্থন
১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থনের স্বর উচ্চতর হয়। ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ অঁদ্রে মালরো (যিনি একসময় ফ্রান্সের সাবেক মন্ত্রীও ছিলেন) এদিন ফ্রান্সের সরকারি রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ফ্রান্স এবং ইউরোপের নানা প্রান্ত থেকে বহু তরুণ তাঁকে চিঠি লিখে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এর ভিত্তিতে তিনি ১৫০ জন তরুণকে নিয়ে একটি টিম গঠন করেছেন, যারা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে যোগ দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। এই ঘোষণা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক মাত্রা প্রদান করে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রথম উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পায়।
একই দিন ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির বার্ষিক সম্মেলনে দলের নেতা এবং হাউস অব কমন্সের সদস্য জেরেমি থর্প বক্তৃতায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন করার জন্য ব্রিটেনের প্রতি জোরালো আবেদন জানান। তিনি বলেন, "আত্মঘাতী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক কাঠামো বজায় রাখা সম্ভব নয়। আমরা অসহায় মানুষের পাশে সবসময়ই আছি।" এছাড়া, তিনি আন্দোলনকারীদের সব ধরনের সাহায্য প্রদানের জন্য দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। এই বক্তব্য পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের রাজনৈতিক মহলে প্রথমবারের মতো এতটা স্পষ্ট সমর্থনের সূচনা করে।
লন্ডনে এদিন শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ওভাল ক্রিকেট খেলার ময়দানে একটি পপ সংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা ঘোষণা করেন যে, উৎসবের টিকেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত সকল অর্থ বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য পাঠানো হবে। এই উৎসবটি সাংস্কৃতিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বের সহানুভূতি জাগানোর একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভারতে: দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং ব্রিগেড গঠনের প্রস্তাব
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী (১৮-২০ সেপ্টেম্বর) 'বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলন' (International Conference on Bangla Desh) এর উদ্বোধনী দিন। এই সম্মেলনটি গান্ধী পিস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় এবং উদ্বোধন করেন ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ। ২৪টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বি. পি. কৈরালা। সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সকল অংশগ্রহণকারী দেশের সমর্থন প্রকাশ পায়। তারা বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ড এবং ভারতে শরণার্থীদের আশ্রয়দানের প্রশংসা করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেয়।
সম্মেলনে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয় এবং বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সমর্থন করা হয়। একটি সর্বসম্মত প্রস্তাবে শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচারের নিন্দা করা হয় এবং পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রগোষ্ঠীর কাছে আবেদন জানানো হয়। জয়প্রকাশ নারায়ণ পটভূমি ব্যাখ্যা করে বলেন, "পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের নেতারা দায়ী নন, দায়ী পাকিস্তানের জঙ্গি শাসকেরা।"
সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব ছিল মুক্তিবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি 'আন্তর্জাতিক ব্রিগেড' গঠনের। এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বি. পি. কৈরালা এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ। এটি বাংলাদেশের সংগ্রামকে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এছাড়া, ভারতীয় পার্লামেন্টারি দপ্তরের মন্ত্রী রাজ বাহাদুর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে লাতিন আমেরিকার সফরে থাকাকালীন চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আয়েন্দে-এর সাথে আলোচনায় বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য ভারত-পাকিস্তান বিরোধকে দায়ী না করে সামরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামকে দায়ী করেন। তিনি শেখ মুজিবের গোপন বিচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এদিন অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইসরায়েলে দূত পাঠানোর খবর অস্বীকার করে।
পাকিস্তানে: রাজনৈতিক বৈঠক এবং সাংবিধানিক পরিবর্তনের ঘোষণা
পাকিস্তানে এদিন রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। করাচিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান নুরুল আমিনের সাথে বৈঠক করেন। একই দিন ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথেও বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলোর বিষয়বস্তু প্রকাশ করা না হলেও, এগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এবং বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতার প্রভাব মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাতে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন যে, ভবিষ্যতের শাসনতন্ত্র জাতীয় পরিষদে পেশ করা হবে এবং জাতীয় পরিষদ তা সংশোধন করতে পারবে। রেডিও পাকিস্তানের খবরে জানানো হয় যে, বর্তমান সংবিধান সংশোধন করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পিপিপি এবং পিডিপির নেতাদের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এই ঘোষণাগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং বাংলাদেশ যুদ্ধের চাপের প্রতিফলন ঘটায়।
দেশব্যাপী গণহত্যা: পৈশাচিক অত্যাচারের কালো অধ্যায়
১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গণহত্যা চালায়, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। এদিনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গণহত্যাগুলো হলো কৃষ্ণপুর, চণ্ডীপুর এবং লালচাঁদপুরে।
কৃষ্ণপুর গণহত্যা: হবিগঞ্জের লাখাই ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি দল পৈশাচিক কায়দায় গণহত্যা চালায়। এতে ১২৭ জন নিরীহ বাঙালি শহীদ হন। গণহত্যার দুই দিন আগে (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজাকাররা গভীর রাতে নৌকা নিয়ে গ্রাম ঘিরে ফেলে। ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার দিকে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ক্যাম্প থেকে হানাদাররা দুটি স্পিডবোটে কৃষ্ণপুরে পৌঁছায়। তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গ্রামে ঢুকেই নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। রাজাকাররা চারপাশ থেকে গুলি করে এবং লুটপাট শুরু করে। লুটপাটের পর ১৩০ জন নিরীহ মানুষকে কমলাময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সারিবদ্ধ করে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। শহীদদের লাশ বলভদ্রা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয় এবং গানপাউডার দিয়ে গ্রামের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই গণহত্যা সিলেট জেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় ঘটে এবং এটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাগুলোর একটি।
চণ্ডীপুর গণহত্যা: কৃষ্ণপুর গণহত্যার পর হানাদাররা রাজাকারদের সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী চণ্ডীপুর গ্রামে যায়। এই গ্রামে মাত্র ১৬টি পরিবার বাস করত। গ্রামবাসীদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়। ভাগ্যক্রমে ২ জন বেঁচে যান, কিন্তু বাকিরা নির্মমভাবে নিহত হন। এই ঘটনা কৃষ্ণপুরের সাথে যুক্ত এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সিস্টেম্যাটিক নির্যাতনের অংশ।
লালচাঁদপুর গণহত্যা: হবিগঞ্জের লালচাঁদপুর এলাকায় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদাররা মধু নমঃশূদ্রের বাড়িতে প্রবেশ করে ৪০ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে সারিবদ্ধ করে বেঁধে রাখে। তারপর গোটা বাড়িতে লুটপাট চালানো হয় এবং ব্রাশফায়ার করে ৪০ জনকে হত্যা করা হয়। অবশেষে গানপাউডার দিয়ে সম্পূর্ণ বাড়িটি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এই গণহত্যা ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুকৃত আক্রমণের একটি দৃষ্টান্ত।
এই গণহত্যাগুলো পাকিস্তানি বাহিনীর 'অপারেশন সার্চলাইট'-এর ধারাবাহিকতায় গ্রামীণ এলাকায় বাঙালি জনগণকে দমন করার কৌশলের অংশ ছিল, যাতে হাজারো নিরীহ মানুষের জীবনহানি ঘটে।
দেশব্যাপী প্রতিরোধ যুদ্ধ: মুক্তিবাহিনীর সাহসী অভিযান
গণহত্যার মুখে মুক্তিবাহিনী এদিন বিভিন্ন সেক্টরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর সফল হামলা চালায়, যা যুদ্ধের গতি পরিবর্তনের সূচনা করে। নিম্নে প্রধান ঘটনাগুলোর বিবরণ:
সিলেটে: মুক্তিবাহিনীর একটি দল সুতারকান্দি গোয়ালীপাড়ায় পাকিস্তানি হানাদারদের উপর আক্রমণ চালায়, যাতে ২ জন হানাদার নিহত হয়। একই দিন শাহবাজপুর চা বাগানে গেরিলা দল টহলরত সৈন্যদের উপর হামলা করে। অপর দুটি গেরিলা দল সরাপাড়ের হানাদার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সোনাই নদী থেকে ১টি ২ ইঞ্চি মর্টার, ২টি এসএলআর এবং ২টি ৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করে। জৈন্তাপুরে আরেক হামলায় ২ জন হানাদার নিহত হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়: ২ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর টহলদার দল চারগাছা বাজারের কাছে পাকিস্তানি টহলকে অ্যামবুশ করে, যাতে ২০ জন হানাদার হতাহত হয়। পরে রাজাকারদের সহযোগিতায় আসা তিনটি নৌকা-ভর্তি হানাদারদের শিরাইলের কাছে অ্যামবুশ করে দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়া হয়, যাতে বেশিরভাগ হানাদার নিহত হয়। এই যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
দিনাজপুর: ৭ নম্বর সেক্টরের হিলিতে ইপিআর কমান্ডার সালেক, বেঙ্গল রেজিমেন্টের মান্নান, ঢাকা পুলিশের হাবিলদার রজব আলী, ছাত্র রঞ্জিত কুমার মহন্ত এবং প্রদীপ কুমার করসহ একটি গেরিলা দলের সাথে পাকিস্তানি হানাদারদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মাইনে বিস্ফোরণে একটি জিপসহ বহু হানাদার হতাহত হয়। ঘোড়াঘাটে ফিলিপসের নেতৃত্বে মাইন বিস্ফোরণে একটি বেডফোর্ড গাড়ি ধ্বংস হয়।
ময়মনসিংহ: বান্দিয়া এলাকায় কোম্পানি কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খানের নেতৃত্বে রাজাকারদের সাথে ৪ ঘণ্টার তুমুল যুদ্ধে ১২ জন রাজাকার নিহত হয়।
চট্টগ্রাম: গৌরাঙ্গপাড়ায় পাকিস্তানি অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণে কয়েকজন হানাদার নিহত হয়।
রাজশাহী: ফারসিপাড়ায় তুমুল যুদ্ধে ৫ জন হানাদার নিহত হয়।
যশোর: টুঙ্গী এলাকায় হামলায় একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় এবং ২ জন হানাদার নিহত হয়।
মুন্সিগঞ্জ: একটি গেরিলা দল লৌহজং থানার কাছে লৌহজং থেকে নারায়ণগঞ্জগামী কয়েক হাজার মণ পাটসহ কয়েকটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়।
এই অভিযানগুলো মুক্তিবাহিনীর গেরিলা কৌশলের সাফল্য প্রদর্শন করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর সরবরাহ লাইন ও মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্ধকার এবং আলোর মিশ্রণে ভরা এক দিন। গণহত্যার নির্মমতা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথকে আরও দৃঢ় করে। এই ঘটনাসমূহ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বাধীনতার লড়াইয়ে জনগণের অটুট ঐক্য এবং বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (সপ্তম, অষ্টম, দশম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড)।
- দৈনিক পাকিস্তান, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।
- দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।
- কৃষ্ণপুর: ধনঞ্জয় গণহত্যা / মোতাহার হোসেন মাহবুব।
- স্বাধীনতাসংগ্রামে প্রবাসী বাঙালি / আবদুল মতিন, র্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশনস, লন্ডন।
- মর্নিং স্টার, লন্ডন, ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।
- আনন্দবাজার পত্রিকা ও যুগান্তর, কলকাতা, ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১।
- Wikipedia: Krishnapur massacre (https://en.wikipedia.org/wiki/Krishnapur_massacre)।
- World meet on Bangla Desh: Report of the International Conference on Bangla Desh, New Delhi, September 18-20, 1971।
- The Daily Star: World meet on Bangladesh opens (https://www.thedailystar.net/news/bangladesh/news/world-meet-bangladesh-opens-2178371)।
মন্তব্য করুন